পঞ্চায়েত ভোটের রাজ্য জুড়ে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। বহু বুথে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে। গণনার দিনেও বহু জায়গা অশান্ত হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেরকমই অশান্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী তথা দুর্গাপুর মহাকুমা আদালতের মুহুরি রতন মণ্ডল। সেই ঘটনায় রতনকে আদালতে তোলা হলে তাঁর জেলে হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক অসিমানন্দ মণ্ডল। তারই প্রতিবাদে ওই বিচারকের এজলাস বয়কট করছে আদালতের তৃণমূলপন্থী বার অ্যাসোসিয়েশন। টানা ৫ দিন ধরে ওই বিচারকের এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে, রাজ্যপালকে রিপোর্ট পাঠিয়ে জানালেন রাজীব
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণনার দিন অশান্তি পাকানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল রতনের বিরুদ্ধে। ভোট গণনার দিন বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর করার পাশাপাশি মেতে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত রতন মণ্ডল সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরের দিন তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়। রতনের আইনজীবীরা আদালতের তাঁর জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, রতনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে বিচারকের এজলাস বয়কট অব্যাহত রেখেছেন আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে রতনকে জামিন দিতে হবে।
জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদের মহাকালী বিদ্যালয়ে ভোট গণনা চলছিল। কিন্তু ভোট গণনা কেন্দ্রে বিরোধীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। তা নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। সেখানে বিরোধীদের মারধর করা হয়। কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমের প্রায় ১০ জন কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল এই অস্বীকার করেছে। এই ঘটনায় বিরোধীরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ রতন মণ্ডল সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। জানা গিয়েছে, চাক তেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডলের স্বামী রতন মণ্ডল। তবে এজলাস বয়কট থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাদী-বিবাদী দুপক্ষকে। প্রতিদিন বিচারকের এজলাসে প্রচুর মামলার শুনানি হয়ে থাকে। কিন্তু এই এজলাস বয়কট করার ফলে সেগুলির শুনানি হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, এজলাস বয়কটের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও এজলাস বয়কটের ঘটনা ঘটেছিল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করেছিলেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি একনায়কের মতো আচরণ করছেন। এই অভিযোগে রাজাশেখর মান্থার এজলাসে আইনজীবীদের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। এনিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি।