হ্যাট্রিক করেছে ইলিশ মাছ। টানা তিন বছর চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উঠেছে বাংলার মৎস্যজীবীদের জালে। তাতে এই রূপোলি ফসল সস্তায় পাওয়ার কথা। সেখানে মহার্ঘ হয়ে উঠেছে ‘হিলসা’। এখন সেটি পাতে তোলা যাচ্ছে না। জিভে জল এলেও তা দেখেই বাজারের পথ ছাড়তে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ দাম জিজ্ঞাসা করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন। যেখানে ২০২৩ সালে ইলিশের জোগান বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। বৃদ্ধির হার প্রায় তিনগুণ।
এদিকে সব ঠিক থাকলে আশা করা হচ্ছে, দুর্গাপুজো পর্যন্ত ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তাহলে বাজারে এত দাম কেন ইলিশ মাছের? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গৃহকর্তাদের মনে। মৎস্যজীবীদের সংগঠন সূত্রে খবর, উৎপাদন বাড়লেই যে দাম কমবে এমন সম্ভাবনা কম। কারণ এই উৎপাদনের ৫০ শতাংশ রূপোলি ফসলই হিমঘরে মজুত করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মৎস্যজীবীরা লাভবান হননি। লাভবান হয়েছে মজুতদাররা। তার ফলে দেড় কেজির ইলিশ মাছের যা দাম হওয়া উচিত, তার থেকে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে মজুতদাররা। তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে মানুষজনকে।’
আর কী জানা যাচ্ছে? অন্যদিকে দিঘা–ডায়মন্ডহারবারে ইলিশের জোগান বেড়ে গিয়েছে। তাই বাংলার বাজারগুলিতে এখন বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ দেখা যাচ্ছে। হয়তো দাম কমছে না। কিন্তু জোগান তো রয়েছেই। এখন শুধু দিঘায় জোগান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন। যেখানে চার বছর আগে বাংলায় ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল ২৮ হাজার মেট্রিক টন। সেখান থেকে দিঘা–ডায়মন্ডহারবারে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছে। মৎস্যজীবীদের কথায়, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে যে অভাব তৈরি হয়েছিল এবার সেই খরা কেটে গিয়েছে।’
আরও পড়ুন: শনিবার বন্ধ থাকবে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো, শিয়ালদা–সেক্টর ফাইভ রুটে দুর্ভোগের আশঙ্কা
ঠিক কী বলছেন মৎস্যমন্ত্রী? এবার ইলিশ নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব হতে দেখা যায়। সেখানে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘রাজ্যে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ২০২২ সালে ৫ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল। সেখানে ২০২৩ সালে অনেক বেশি ইলিশ পাওয়া গিয়েছে। মূলত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তাই বর্ষায় ইলিশের জোগান বেড়েছে। দু’মাসের বদলে তিনমাস এই বিধিনিষেধ থাকলে ইলিশগুলি আয়তনে আরও বেড়ে যেত।’ বিধায়কদের কি ইলিশ মাছ দেওয়া হবে? প্রশ্ন শুনে মৎস্যমন্ত্রীর সটান জবাব, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’