শোক আর কর্তব্যের টানাপোড়েনে যে সময় অধিকাংশ মানুষ ভেঙে পড়েন, সেই সময় এক চিকিৎসকের কাজ মন ছুঁয়ে গেল সকলের। চুঁচুড়ার ইমামবাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে হারিয়েছেন তাঁর বাবাকে। ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন বাবা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই গভীর শোক নিয়েই চেম্বারে ঢুকে পড়লেন চিকিৎসক। কারণ, দূরদূরান্ত থেকে বৃষ্টি মাথায় করে রোগীরা এসে পৌঁছেছেন তাঁর চেম্বারে। কাউকে ফিরিয়ে দেননি তিনি। রোগী দেখার পর বাবার শেষ কৃত্য সম্পন্ন করলেন। (আরও পড়ুন: IIM কলকাতায় হস্টেলে ধর্ষণ তরুণীকে, গ্রেফতার অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া)
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় আছে 'রেয়ার আর্থ' পদার্থ, কবে হতে পারে খনিজ ব্লকের নিলাম?
আরও পড়ুন: হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি রুখতে কড়া নিয়ম, হাজিরা কম হলেই কাটা যাবে বেতন
এদিন সকাল থেকেই আকাশ ছিল গম্ভীর। অবিরাম বৃষ্টিতে শহর কার্যত ভিজে একসার। কিন্তু মানুষজন ছুটে এসেছেন শিবাশিসবাবুর কাছে চিকিৎসার আশায়। অনেকের মুখেই ছিল অসহায়তার ছাপ। তাঁদের অজান্তেই ওই মুহূর্তে শিবাশিসবাবুর ঘরে শায়িত ছিলেন বাবা। তবুও পেশার প্রতি দায়িত্ববোধ আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতায় রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। সব রোগী দেখা শেষ করে তবেই বাবার শেষযাত্রার প্রস্তুতি নেন। যাঁরা ঘটনাটা জানতেন না, তাঁরা শুনে স্তব্ধ। যাঁরা জানতেন, তাঁরা বাকরুদ্ধ। (আরও পড়ুন: সীমান্তে বাংলাদেশি অপরাধীদের হামলায় জখম বিএসএফ জওয়ান, আটক ২)
আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে আটক ৭৫০ পরিযায়ীর ভেরিফিকেশন করেছে রাজ্য, বিতর্কের মাঝে জানাল পুলিশ
শহরের নানা মহলে শিবাশিসবাবুর এই মানবিকতা ও পেশাগত নিষ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তেই। চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, শিবাশিসবাবু শুধুই চিকিৎসক নন, তিনি একজন দরদী মানুষ। রাতে যেকোনও সময়ে ডাকলে পৌঁছে যান। এদিন যা করলেন, তা অতুলনীয়। এক রোগী বলেন, ‘আমরা ওষুধ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম খবরটা। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। যিনি এতখানি ব্যথায় ডুবে থেকেও আমাদের কথা ভোলেন না, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ না হয়ে উপায় নেই।’ (আরও পড়ুন: কসবার কলেজের দেওয়ালে এখনও মোছা হয়নি 'মনোজিত দাদা আমাদের হৃদয়ে' গ্রাফিটি!)
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের 'বিরোধিতা' করে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের বিতর্কিত বার্তা শুভেন্দুর
তবে নিজে এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না চিকিৎসক। সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন সব প্রশংসা। তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, রোগীরা ভরসা করে অনেক দূর থেকে আসেন। যেদিন শরীর খারাপ, তার মধ্যেও যখন ছুটে এসেছেন, তখন তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া কি সম্ভব? এই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয় সাহিত্যিক বনফুলের অমর সৃষ্টি ‘অগ্নীশ্বর’-কে, যাঁর কাহিনিতে চিকিৎসক নিজের বাবার মৃত্যুর দিনও চেম্বার বন্ধ রাখেন না। অবাক করার মতো হলেও সেই চরিত্রই যেন বাস্তবে দেখা গেল।