নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা সত্ত্বেও মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে প্রায় ২০০ চা বাগান খোলা থাকল। বুধবার বাগান বন্ধ রাখা হলেও এই সংক্রান্ত কোনও সরকারি নির্দেশ পাওয়া যায়নি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলে মোট ২৮৩টি টা বাগান রয়েছে, যেখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। সাপ্তাহিক রেশন ছাড়া তাঁদের মাথাপিছু দৈনিক আয় ১৩২.৫০ টাকা। এ বাদে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা মিলিয়ে ৪০ হাজার ছোট চা বাগান রয়েছে এবং সেখানে কর্মরত প্রায় একলাখ শ্রমিক। এই সমস্ত চা বাগানের অধিকাংশই মঙ্গলবার খোলা ছিল।দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা জানিয়েছেন, লকডাউনে সমস্ত চা বাগান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ায় অসমে এ দিন কোনও বাগানই খোলেনি এবং শ্রমিকদের উপস্থিতিও নজরে পড়েনি।এই বিষয়ে টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে চা বাগান বন্ধ রাখার কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায়নি। এই কারণে সোমবারও অঞ্চলের বেশিরভাগ বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। এই নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সন্দীপ মুখোপাধ্যায়।টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্যের দাবি, গত ২৩ মার্চ লকডাউন সম্পর্কে জারি করা রাজ্য সরকারের নির্দেশিকায় চা বাগান অধ্যুষিত অঞ্চল বন্ধ রাখার কোনও উল্লেখ ছিল না। তবে ২৪ মার্চ রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রকাশিত নির্দেশিকায় গোটা পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন আরোপের আদেশ থাকায় এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে চা শিল্পমহল।প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চে প্রকাশিত রাজ্য সরকারের নির্দেশিকায় সমস্ত রকম গণপরিবহণ পরিষেবা, দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও কর্মশালা এবং গুদাম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।সেই সঙ্গে সোমবার বিকেল ৫টা থেকে ৭ জনের বেশি জনসমাগমের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নির্দেশিকায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কার্শিয়াং, কালিম্পং, অলিপুরদুয়ার ও জয়গাঁও শহরের উল্লেখ থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চল ঠাঁই পায়নি। তবে ২৪ মার্চ প্রকাশিত নির্দেশিকায় গোটা রাজ্যেই লকডাউন জারির আদেশ দেয় প্রশাসন।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বাগান ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘এখন ফার্স্ট ফ্লাশের সময়, যখন মোটা অর্থ উপার্জন হয় এবং আমাদের সারা বছরের সংস্থান হয়। এই সময় চা বাগান বন্ধ রাখলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। তা ছাড়া, প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকরা তাঁদের বেতন ও রেশন দাবি করবেন। আমরা বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে সেই খরচের ভার আমাদের কাঁধেই চাপবে। তার চেয়ে প্রশাসন যা চায় সিদ্ধান্ত নিক।’করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে রাজ্যজুড়ে লকডাউনের আওতায় চা বাগানগুলিকে রাখার আবেদন জানিয়ে জেলাশাসককে মঙ্গলবার চিঠি লিখেছেন সিপিএম সমর্থিত জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রেড ইউনিয়নস-এর নেতা সমন পাঠক।স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রূপণ দেবের দাবি, চা বাগানে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে স্থানীয়দের সাম্প্রতিক সফর-ইতিহাস সম্পর্কে সমীক্ষা করুক প্রশাসন। চা শ্রমিক পরিবারের বহু সদস্য কাজের স্বার্থে ভিনরাজ্যে বসবাস করেন। এই সময় তাঁরা বাংলায় ঘরে ফিরেছেন। বাগান বন্ধ করলে শ্রমিকদের রেশন ও বেতনের ব্যবস্থা সরকার না করলে এলাকায় অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।