অজয় নদ যেন দীর্ঘদিন ধরে ছিল দুই জেলার মাঝে এক প্রাকৃতিক বাধা। বীরভূমের জয়দেব-কেঁদুলি আর পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার শিবপুর। নদীর স্রোত আর বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পেরিয়ে যাতায়াত করতে বাসিন্দাদের। কিন্তু, বহু বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। এবার এই নদী পারাপারে আর নির্ভর করতে হবে না অস্থায়ী সেতু কিংবা নৌকার উপর। অবশেষে চালু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত জয়দেব-নীলকণ্ঠ সেতু।
আরও পড়ুন: অজয়-ভাগীরথীর জলবৃদ্ধি, প্লাবিত কাটোয়া-নদিয়ার বহু এলাকা, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ
আগামী মঙ্গলবার ২৯ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করতে চলেছেন এই। তার আগেই বীরভূম সফরে আসছেন তিনি ২৮ জুলাই। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ইতিমধ্যে সেতুর কাজ খতিয়ে দেখতে পরিদর্শন করেছেন শনিবার। সেতুটির বিশেষত্ব শুধু দৈর্ঘ্যে নয়, তার আরও অনেক গুরুত্ব আছে। প্রায় ২.৭৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর মূল অংশ ১০৫৭ মিটার অজয় নদীর ওপর তৈরি হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের শিবপুর থেকে শুরু হয়ে এটি পৌঁছে গিয়েছে বীরভূমের টিকরবেতা পর্যন্ত। রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাঁকসায় এক সরকারি সভায় এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। বরাদ্দ হয়েছিল ১৬৫ কোটি টাকা। জমি সংক্রান্ত সমস্যা ও পরিবেশগত ছাড়পত্রের জট কেটে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়েছে কাজ। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সেতুর পাশাপাশি অ্যাপ্রোচ রোডও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক পোন্নমবলম এস, মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই সহ একাধিক জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিক।
এই সেতুর নামকরণ নিয়েও রয়েছে বিশেষ আবেগ। স্থানীয়দের আবেদনে সাড়া দিয়ে সেতুর নাম রাখা হচ্ছে ‘জয়দেব-নীলকণ্ঠ সেতু’। একদিকে বীরভূমের কবি সাধক জয়দেব, অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের প্রখ্যাত সাহিত্যিক নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা দুই জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন ইতিহাস ও সংস্কৃতির মঞ্চে। তাঁদের স্মরণেই এমন নাম সেতুর।
সেতু চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বড় রকমের পরিবর্তন আসবে। সাধারণত বর্ষায় যখন অস্থায়ী সেতু ভেসে গেলে দুই পাড়ের মানুষকে ২০-২৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। দুর্গাপুর থেকে ইলামবাজার কিংবা শান্তিনিকেতনে যেতে এটাই ছিল একমাত্র পথ। নতুন সেতু চালু হলে মুচিপাড়া-শিবপুর রুটে যাতায়াত অনেকটাই সহজ হবে। দূরত্ব কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, শুধু যাতায়াত নয়, এই সেতু ঘিরে খুলে যাবে বাণিজ্যেরও নতুন দিগন্ত। কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প এমনকি পর্যটন ক্ষেত্রেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সবাই। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, এই সেতু শুধু যোগাযোগের জন্য নয়, এক নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এই অঞ্চলকে।