আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করলেন আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক। দুর্নীতি দমন আইনের ৪২০, ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮ এবং ৭ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এবার শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া। আদালত সূত্রে খবর, আগামী ২২ জুলাই প্রথম সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের পরই প্রকাশ্যে আসে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি করে দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। তাদের চার্জশিটে মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সুমন হাজরা এবং বিপ্লব সিং, জুনিয়র চিকিৎসক আশিস পাণ্ডে এবং দেহরক্ষী আশরফ আলি খানের নাম রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা সকলেই জেলবন্দী। জানা যাচ্ছে, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই জালিয়াতি, প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ধারাতে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ অভিযুক্ত আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি থেকে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শুনানির শেষেই বিচারক তাঁদের এই আবেদন খারিজ হয়ে দেন।
আদালত সূত্রে খবর, আগামী ২২ জুলাই প্রথম সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে। অভয়া-কাণ্ডের পর তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দেদার দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। পরবর্তীতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তবে ইডি তদন্তও চেয়েছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনার অনেক আগেই আরজি করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন দেবল ঘোষ। অভয়া-কাণ্ডের পর সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। আরজি কর হাসপাতালে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনার নামে টেন্ডার দুর্নীতি হয়েছিল আর জি করে। হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘনিষ্ঠদের টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছর ২৯ নভেম্বর আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা করে সিবিআই। চার্জশিটে নাম রয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ-সহ পাঁচ জনের। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। টানা কয়েক দিন সিবিআই তাঁকে দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তারপরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে এই মামলার সূত্র ধরেই বিপ্লব, আফসার এবং সুমনকে গ্রেফতার করেছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। এই মামলায় শেষ গ্রেফতার করা হয় আশিসকে।
উল্লেখ্য, ৯ অগস্ট ২০২৪-এ আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনারহল থেকে চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারে দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। সেই সময়ই প্রকাশ্যে আসে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। ইতিমধ্যে সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। অন্যদিকে, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। এই মামলায় গত বছর ডিসেম্বরে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষ এখনও জেলবন্দি রয়েছেন।