ওড়িশার পুরী শহর, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য আসেন বহু মানুষ। ভগবান জগন্নাথের ধামকে বলা হয় মহাধাম, প্রদীপকে বলা হয় মহাদীপ, তাঁর বাহুকে বলা হয় মহাবাহু এবং তাঁর জন্য প্রস্তুত প্রসাদকে বলা হয় মহাপ্রসাদ। আসুন জেনে নিই ভগবান জগন্নাথের উদ্দেশ্যে যে রান্নাঘরে নৈবেদ্য প্রস্তুত করা হয়, সেখানে নৈবেদ্য প্রস্তুত করার পদ্ধতি এবং ভগবানকে নৈবেদ্য প্রদানের নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।পুরীর জগন্নাথ ধামের মতো, সেখানে ভগবানের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য প্রস্তুতকারী রান্নাঘরটিও অনন্য। যে রান্নাঘরে ভগবান জগন্নাথের জন্য খাবার তৈরি করা হয়, সেখানে কোনও ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে যখন ভগবান জগন্নাথের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত নৈবেদ্য তৈরি করা হচ্ছে, তখন কোনও ব্যক্তির পক্ষে সেই খানে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, যদি কোনও ব্যক্তি নৈবেদ্য বহন করার সময় পথের মাঝখানে আসে, তাহলে সেই নৈবেদ্য ঈশ্বরকে দেওয়া হয় না।ঈশ্বরের রান্নাঘরে খাবার তৈরির ঐতিহ্যও অনন্য। এখানে ঈশ্বরের জন্য খাবার রান্না করার জন্য শুধুমাত্র মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, মাটিকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, তাই এখানে মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয় এবং একবার ব্যবহার করার পরে, সেগুলি আর কখনও পুনঃব্যবহৃত হয় না। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য প্রস্তুত করার জন্য, মাটির পাত্রগুলি চুলার উপর একটির উপরে আরেকটি রাখা হয়। এই পাত্রগুলির মধ্যে, উপরের পাত্রটিতে প্রথমে রান্না হয় এবং আশ্চর্যজনকভাবে, নীচের পাত্রটিতে সব শেষে রান্না হয়।জগন্নাথদেবকে দেওয়া ৫৬ ভোগে রাখা হয়,১) উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি,২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু,৩) খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর,৪) দই,৫) পাচিলা কাঁদালি অর্থাৎ টুকরো টুকরো কলা,৬) কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত,৭) টাটা খিঁচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিঁচুড়ি,৮) মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের কেক,৯) বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় কেক,১০) মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে,১১) হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি কেক,১২) ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের প্যান কেক,১৩) এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক,১৪) আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি,১৫) শাক ভাজা,১৬) মরীচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু,১৭) করলা ভাজা,১৮) ছোট্ট পিঠে,১৯) বারা অর্থাৎ দুধের তৈরি মিষ্টি,২০) আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি,২১) বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে,২২) পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত,২৩)খিড়ি অর্থাৎ দুধভাত,২৪)কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি২৫) পাত মনোহার মিষ্টি২৬) তাকুয়া মিষ্টি,২৭) ভাগ পিঠে,২৮) গোটাই অর্থাৎ নিমকি,২৯) দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি,৩০) কাকারা মিষ্টি ৷৩১) লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট,৩২) আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি,৩৩) বিড়ি পিঠে,৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি,৩৫) খাস্তা পুরি,৩৬) কাদালি বারা,৩৭) মাধু রুচী অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি,৩৮) সানা আরিশা অর্থাৎ রাইস কেক,৩৯) পদ্ম পিঠে,৪০) পিঠে,৪১) কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি.৪২) দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত,৪৩) বড় আরিশা,৪৪) ত্রিপুরি,৪৫) সাকারা অর্থাৎ সুগার ক্যান্ডি,৪৬) সুজি ক্ষীর,৪৭) মুগা সিজা,৪৮) মনোহরা মিষ্টি,৪৯) মাগাজা লাড্ডু,৫০) পানা,৫১) অন্ন,৫২) ঘি ভাত,৫৩) ডাল,৫৪) বিসার অর্থাৎ সবজি,৫৫) মাহুর অর্থাৎ লাবরা,৫৬) সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত