কোন রূপকথা নয়। এক অদম্য মা ও ছেলের জেদের কাছে কঠিন পরিস্থিতির হেরে যাওয়া বাস্তব। নেম সিং জুরেল। কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক। ধ্রুব জুরেলর বাবা। তিনি কখনওই চাইতেন না তাঁর ছেলে খেলাধুলার বিষয়ে বিশেষ করে ক্রিকেটার হিসাবে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই সৈনিক চাইতেন জুরেল তাঁর পথ অনুসরণ করেই সেনাবাহিনীতে নাম লেখাক। কিংবা কোনও সরকারি কাজ করুক। তবে জুরেলের ঝোঁক বরাবরই ছিল ক্রিকেটের দিকে। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনতে না পারায় ১৪ বছর বয়সে ঘর ছাড়তে চান আজকের তরুণ উঠতি প্রতিভা জুরেল। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নামেন তার মা। নিজের সোনার চেন বিক্রি করে ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনে দেন ছেলেকে। সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২২ বছর বয়সী এই উঠতি ক্রিকেটার বলেন, ‘সেই সময় আমি এটা বুঝতে পারিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম আমার জন্য মা’য়ের এটা কত বড় একটা ত্যাগ। এর ফলে আমি আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।'
এই বছর আইপিএল থেকে উঠে আসা প্রতিভা সম্পন্ন ক্রিকেটাদের মধ্যে অন্যতম ধ্রুব। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটান তিনি। প্রথম ম্যাচে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে নামেন। সেই সময় রাজস্থান রয়্যালসের জেতার জন্য দরকার ৩০ বলে ৭৪ রান। এই কঠিনতম পরিস্থিতিতে ৮ নম্বর ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নেমে ১৫ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ধ্রুব। প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চেনান তিনি। শিমরন হেটমেয়ার থেকে জেসন হোল্ডারেপ মতো ক্রিকেটার রয়েছে যে দলে সেই দলের ফিনিশর হিসাবে তিনি নিজেকে তুলে ধরেন। যা নিজের কাছে থাকা প্রতিভার সবচেয়ে বড় উপহার। এর সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিকেট বিশ্বের কিংবদন্তিরা প্রশংসা করতে থাকে তাঁর। তবে তিনি মনে করেন তাঁর কাছে সব থেকে বড় উপহার হল বাবার দেওয়া কিছু পরামর্শ। ধ্রুব বলেন, 'সেই ম্যাচ দেখতে আসেন আমার বাবা ও মা। তখন বাবা মাকে বলেন তোমার সোনার চেনের দাম আজকে শোধ হয়ে যাবে।'
প্রতিভাবান উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের কাছে কিছুই সহজে আসেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। তাঁর মায়ের সমর্থনে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, ধ্রুব উত্তরপ্রদেশের আগ্রাতে জুনিয়র ক্রিকেটে নিয়মিত রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় প্রথমে থাকতে শুরু করেন। আরও ভাল সুযোগের জন্য, তিনি দিল্লি এনসিআরের নয়ডায় প্র্যাকটিস করতে শুরু করেন। কিন্তু আগ্রা থেকে নয়ডায় প্রতিদিন যাতায়াত মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ফের এগিয়ে আসেন ধ্রুবর মা। ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন নয়ডাতে। শুরু হয় এক নতুন লড়াই।
নিজের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সহ অধিনায়ক ছিলেন ধ্রুব। এই তরুণের একনিষ্ঠতা দেখে তাঁকে ক্রিকেট খেলতে না দেওয়া সেনা কর্মী বাবারও মন গলে যায়। তাঁর বাবাকেও প্রতিবেশীদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই বিষয়ে ধ্রুব জানান, 'বাবা আমাদের প্রতিবেশীদের থেকে নিয়মিত কটূক্তি শুনেছেন। তাঁকে শুনতে হয় যে তিনি আমাকে ক্রিকেট খেলার অনুমতি দিয়ে আমার জীবন নষ্ট করছেন।' তিনি আরও জানান, আইপিএলে দল না পাওয়ার সময় তাঁর বাবা অনেক সমর্থন করেছে তাঁকে। তিনি বলেন, 'সেই সময় বাবা বুঝিয়েছিল কোনও নেতিবাচক দিকে তাকাতে হবে না। আমাকে আলাদা আলাদা কিছু করতে হবে। আর সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।'
অবশেষে সুযোগ আসে ২০২২ সালে। রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে প্রাথমিক মূল্য ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নেয়। তবে প্রথম মরশুমে খেলার সুযোগ পাননি তিনি। গুজরাট টাইটানসের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে হারার পরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। তখনই টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে ধ্রুবকে জানিয়ে দেওয়া হয় পরের মরশুমে ছয় বা সাত নম্বরে খেলতে পারেন তিনি। ধ্রুবর আইপিএল অভিষেক হওয়ার পর তিনি জানান, 'আমার যশস্বী,বাটলার ভাই, সঞ্জু স্যামসন ভাই এদের সাথে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার কোনও সুযোগ ছিল না। কুমার সাঙ্গাকারা স্যার এবং ম্যানেজমেন্ট ভেবেছিল ৬ বা ৭ নম্বরে ব্যাটিং করাতে হবে। আর গত বছর ফাইনালের পর সেটাই আমাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে রাজস্থান ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচেরা আমাকে অনেক সাহায্য করেন। আমি রাজস্থান রয়্যালসে যোগ দেওয়ার পর থেকে সেখানে দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা অনুশীলন করতাম। পরিস্থিতিগত অনুশীলন এবং পাওয়ার হিটিং সবকিছুই আমি নিয়মিতভাবে প্র্যাকটিস করতাম। এর সাহায্যে আমি অনেক আত্মবিশ্বাস তৈরি করি এবং অবশেষে যখন খেলার সুযোগ পাই তখন নিজেকে তুলে ধরেছিলাম।'
(আইপিএলের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে- http://betvisa69.com/sports/ipl)
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।