লোকপালের সিদ্ধান্তে তুমুল অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সিদ্ধান্তের উপরে দেওয়া হল স্থগিতাদেশ। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি অভয় এস ওখার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত ভারতের দুর্নীতি-বিরোধী ওম্বুডসম্যান করতে পারবেন বলে লোকপাল যে নির্দেশ দিয়েছিল এবং নিজেদের এক্তিয়ার নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছিল, সেটা ‘খুব বিরক্তিকর’। সেই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং লোকপালের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নোটিশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতিরা সরকারি কর্মীরা মতো নন, বলল সুপ্রিম কোর্ট
বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালতের বিশেষ বেঞ্চ জানিয়েছে, লোকপাল এবং ২০১৩ সালের লোকায়ুক্ত আইনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়েন না হাইকোর্টের বিচারপতিরা। কারণ দেশের সংবিধানের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করা হয়। তাঁরা আর পাঁচজন ‘সরকারি কর্মচারী’-র মতো নন। যাঁরা সংসদে পাশ করা আইনের মাধ্যমে গঠিত কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, যে হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার নাম প্রকাশ করা যাবে না। যাঁর বিরুদ্ধে এক অতিরিক্ত জেলা বিচারক এবং অপর এক হাইকোর্টের বিচারপতির উপরে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে ওই অভিযোগের বিষয়বস্তু প্রকাশের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে শীর্ষ আদালত।
‘আমরা আছি’, লোকপালকে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট
বর্তমানে কর্মরত হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের ক্ষেত্রে ওম্বুডসম্যান যে পদক্ষেপ করেছেন, তাতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর বিষয়। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দেওয়ার সুপারিশ করছি।’ সেইসঙ্গে রীতিমতো কড়া ভাষায় লোকপালকে সতর্ক করে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘আমরা (আপনাদের) নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিলাম। আমরা আশা করছি যে কেন স্থগিতাদেশ দেওয়া হল, সেটা লোকপাল বুঝতে পারবে এবং ব্যাপারটা নিয়ে আর কোনও পদক্ষেপ করবে না। নাহলে আমরা আছি।’
বিপদে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা, মত সিব্বলের
এমনিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি সহমত পোষণ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়াল করেন, হাইকোর্টের বিচারপতি কখনও লোকপাল আইনের আওতায় আসবেন না। একইসুরে সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কপিল সিব্বল সওয়াল করেন, লোকপাল যে এরকম ব্যাখ্যার পথে হেঁটেছে, সেটা বিপদে পরিপূর্ণ।
তারইমধ্যে লোকপাল যে যুক্তিতে নিজেদের এক্তিয়ারের ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেটা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিষয়টিতে দু'জন বর্ষীয়ান আইনজীবীর সহায়তা চেয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী ১৮ মার্চ সেই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।