মহম্মদ ইউনুসের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবারই (১৩ মার্চ, ২০২৫) চারদিনের সফরে বাংলাদেশে পৌঁছবেন রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই সফরের দ্বিতীয় দিনে (আগামী শুক্রবার - ১৪ মার্চ, ২০২৫) রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে থাকবেন কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ১৪ মার্চ সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেবেন গুতেরেস। কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর গুতেরেসকে স্বাগত জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুক-ই–আজম বীর প্রতীক। সেখান থেকে সোজা উখিয়া নিয়ে যাওয়া হবে গুতেরেসকে। সেখানেই রয়েছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির।
অন্যদিকে, ওই একই দিনে বিকেল ৪টে নাগাদ হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে উখিয়া যাবেন ইউনুস। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে প্রথমবারের জন্য রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করবেন ইউনুস। যদিও গুতেরেস আগেও কয়েকবার এখানে এসে ঘুরে গিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, শরবত-সহ নানা ধরনের খাবার খেয়ে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইফতার সারবেন গুতেরেস ও ইউনুস।
তবে, নেহাতই ইফতার সারার জন্য যে গুতেরেসের এই সফর নয়, সেটা বলাই বাহুল্য। এর আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কট-সহ নানা ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনুসকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
দাবি করা হচ্ছে, গুতেরেসকে নাগালে পেলেই তাঁদের দাবি-দাওয়া সরাসরি রাষ্ট্র সংঘের প্রধানকে জানাবেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যাতে রোহিঙ্গাদের জন্য 'সেফ জোন' তৈরি করার বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেন, গুতেরেসকে সেই আবেদন জানানো হবে।
এদিকে, ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের আশ্রিতদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়েছে রাষ্ট্র সংঘ। তাতে যে খাদ্য এবং শিশুদের শিক্ষার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেই বিষয়েও গুতেরেসকে অবহিত করা হবে। এই সমস্ত কথা নাকি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাই গুতেরেসকে জানাবেন।
সংশ্লি়ষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, এই ইফতার পার্টি আসলে পুরোদস্তুর আন্তর্জাতিক কূটনীতির অংশ হতে চলেছে। একদিকে, বাংলাদেশের কেয়ারটেকার সরকার বাকি বিশ্বকে বার্তা দিতে চাইছে, তারা মানবিকভাবে এবং গণতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের সমস্যা মেটাতে চায়।
অন্যদিকে, মায়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি যেভাবে ইউনুস প্রশাসনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, সেই বিষয়ে যাতে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন ও সাহায্য আদায় করা যায়, সেই চেষ্টাও করছে ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার। আর, এই সুবিধা আদায় করতে ভিটে-মাটি হারানো রোহিঙ্গাদেরই কার্যত এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।