প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে আছে ভয়াবহ এইডস সংক্রমণ। পরিস্থিতি এমনই যে বিয়ের আগে এইচআইভি /এইডস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে মেঘালয় সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমপারিন লিংডো। কারণ রাজ্যে সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে এবং এটি ভারতের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার মেঘালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমপারিন লিংডো একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর এই প্রস্তাব ঘোষণা করেন। ইস্ট খাসি হিলস জেলা-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এইচআইভি /এইডস সংক্রমণ দ্বিগুণ হওয়ার উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসে। বর্তমানে মেঘালয় জাতীয়ভাবে এইচআইভি /এইডস সংক্রমণে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এবং উত্তর-পূর্ব ভারত এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ এই রাজ্যে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'যদি গোয়া এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে পারে, তাহলে মেঘালয় নিজস্ব আইন প্রণয়ন করতে পারবে না কেন? এই আইন বৃহত্তর সমাজের উপকারে আসবে। রাজ্য এখন মানসিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।' তিনি আরও বলেন, রাজ্যের ইস্ট খাসি হিলসে বর্তমানে ৩,৪৩২ জন এইচআইভি /এইডস আক্রান্ত, যাদের মধ্যে মাত্র ১,৫৮১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৬৮১ জন রোগী চিকিৎসা থেকে সরে গেছেন, এবং ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর! মা-বাবার দেখভালের জন্য ৩০ দিনের ছুটি
মন্ত্রী লিংডো আরও জানান, 'আমরা এখনও শুধুমাত্র পূর্ব খাসি পাহাড় নিয়ে কথা বলেছি, সেখানে সংখ্যাটি খুবই বেশি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জয়ন্তিয়া হিলস অঞ্চলে, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় জেলাতেই।'তিনি বলেন, জনসচেতনতা প্রচার কিছুটা সফল হলেও, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ রয়েছে যথাযথ পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলায়। বর্তমানে প্রচলিত আইনি কাঠামো হয়তো কঠোর পরীক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তাই নতুন আইন বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, যা গোয়ার মডেল অনুসরণ করতে পারে।মেঘালয় সরকার জয়ন্তিয়া ও গারো পাহাড় এলাকায়ও আলোচনার পর্ব চালিয়ে যাবে, এবং স্থানীয় প্রশাসন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে অঞ্চলভিত্তিক কৌশল তৈরি করবে। সংক্রমণের হটস্পট সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ না করে কোনওরকম সামাজিক কলঙ্ক এড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর! মা-বাবার দেখভালের জন্য ৩০ দিনের ছুটি
মন্ত্রী জানান, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেওয়া এখনও মেঘালয়ে সংক্রমণের প্রধান কারণ নয়, কারণ এই ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করা কঠিন, যা অন্যান্য রাজ্যে তুলনামূলকভাবে সহজ। তিনি আরও বলেন,' যদি ঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়, এইচআইভি /এইডস মারাত্মক নয় একে ক্যান্সার বা যক্ষ্মার মতো নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু আমরা জানি আরও অনেক আক্রান্ত মানুষ আছেন যারা এখনও পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসেননি। আমাদের বর্তমান পরীক্ষার ক্ষমতা হয়তো আসল পরিস্থিতি পুরোপুরি ধরতে পারছে না।' এই প্রস্তাবিত সমগ্র নীতিমালা শুধু বিয়ের আগে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা নয়, বরং সংক্রমণ প্রতিরোধ, আক্রান্তদের চিকিৎসা, ও তাদের নিয়মিত ফলো‑আপ নিশ্চিত করা এইসব দিক সামগ্রিকভাবে কভার করবে।স্বাস্থ্য দফতর বাস্তবায়নের মূল দায়িত্বে থাকবে এবং আইন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিয়ের আগে এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার আইনি দিকও খতিয়ে দেখা হবে।