Byrnihat town:দিল্লি নয়, এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর মেঘালয়ের ছোট্ট শিল্পনগরী বর্ণিহাট।যার জেরে সেই শহরে শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন হাজার হাজার মানুষ।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন হাজার হাজার বাসিন্দা! সেটি কোন দেশে?
দিল্লি নয়, এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর মেঘালয়ের ছোট্ট শিল্পনগরী বর্ণিহাট।যার জেরে সেই শহরে শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন হাজার হাজার মানুষ। সুইস এয়ার টেকনোলজি সংস্থা 'আইকিউ এয়ার' ২০২৪ সালে বিশ্ব বায়ু মান সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই মুহূর্তে মেঘালয়-অসম সীমান্তের এই শহরটিতে বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ। (আরও পড়ুন: 'চিনের প্রতিবেশী হতে চাই' বলে কি ফের ভারতের সঙ্গে দুষ্টুমি 'গার্ডিয়ান' ইউনুসের?)
বর্ণিহাট শহরের ২ বছর বয়সি সুমাইয়া আনসারি বেশ কয়েক দিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। মার্চ মাসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অক্সিজেন দিতে হয়। দুই দিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফেরে সে। সুমাইয়ার বাবা আবদুল হালিম বলেন, ‘অত্যন্ত ভয়ের অভিজ্ঞতা ছিল, ওর নিঃশ্বাস ফেলার অবস্থা ছিল মাছের মতো।’ দুই দিন পর অবশ্য তিনি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। তবে শুধু সুমাইয়া নয় এই শিল্প শহরের অনেক বাসিন্দাই এখন নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন, চিকিৎসকদের মতে যা দূষণের উচ্চ মাত্রার সংস্পর্শে থাকার ফল হতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল এখন দূষণে বিপর্যস্ত। (আরও পড়ুন: চাকরিহারা শিক্ষকদের চোখে ধুলো, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা নিয়ে বড় দাবি অভিজিতের)
আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বর্ণিহাটের বার্ষিক গড় পিএম২.৫ ঘনমাত্রা ছিল ১২৮.২ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত মাত্রার ২৫ গুণেরও বেশি। পিএম২.৫ হল এমন ধূলিকণার সূক্ষ্ম কণা, যা ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্মক শ্বাসযন্ত্র ও হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্ণিহাটে শ্বাসযন্ত্রজনিত সংক্রমণের ঘটনা ২০২২ সালে ২০৮২ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৩৬৮১ হয়েছে। বর্ণিহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ড. জে মারাক বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন দেখা রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশরই কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে।’ অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিষাক্ত বাতাসে ত্বকে চুলকানি ও চোখে জ্বালা হয়, ফসল নষ্ট হয়, এমনকি কাপড় শুকানোর মতো সাধারণ কাজেও সমস্যা হয়। কৃষক দিলদার হোসেন বলেন, ‘সব কিছুতেই ধুলো বা ছাই জমে থাকে।' (আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ভারত বোঝাল - 'আপনাকে বড় বলে, বড় সে নয়...')
সমালোচকদের মতে,বর্ণিহাটের পরিস্থিতি ভারতের বড় শহরগুলির পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়া দূষণের একটি প্রতিফলন, যেখানে দ্রুত শিল্পায়ন পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বর্ণিহাটে দূষণ শুধু শীতকালেই হয় না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পুরো বছরজুড়েই শহরে বায়ুর মান খারাপ থাকে। এই শহরে প্রায় ৮০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার অনেকগুলিই উচ্চমাত্রায় দূষণকারী। অসম দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান অরূপ কুমার মিশ্র বলেন, ‘মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চল আর অসমের সমভূমির মাঝে অবস্থিত এই শহরে দূষিত বায়ু ছড়িয়ে পড়ার জায়গা নেই।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘালয় সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, শহরের অবস্থান সমস্যার সমাধানকে আরও জটিল করেছে। কারণ দুটি রাজ্যই একে অপরকে দোষারোপ করে আসছিল। তবে মার্চ মাসে আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর অসম ও মেঘালয় যৌথ কমিটি গঠন করে বর্ণিহাটের দূষণ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।