জনতা কার্ফুর এক বছর। ২২ মার্চ ২০২০। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) আহ্বানে টানা ১৪ ঘণ্টা গৃহবন্দি ছিলেন আমজনতা।
গত বছর তখনও করোনা সম্পর্কে এতটা সচেতন হয়নি আমজনতা। ট্রেনে-বাসে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে নতুন সংক্রমণের খবর। এমন সময়েই ১৯ মার্চ রাতে হঠাত্ই এল খবর। দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি কতটা খারাপ তার ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে করোনা রুখতে সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরেন।
সামাজিক দূরত্ববিধি পালনের উদ্দেশ্যেই দেশবাসীকে জনতা কার্ফু-র ডাক দেন নমো। তিনি জানান, 'আগামী ২২ মার্চ জনতা কার্ফু পালনের আহ্বান জানাই। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা সকলে নিজেদের বাড়িতে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করব।' এ বিষয়ে দেশবাসীর সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা :
জনতা কার্ফুর দিন বিকেল ৫টায় করোনা যোদ্ধাদের উদ্দেশে সম্মান জানানোরও আহ্বান জানান মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর কথা মাথায় রেখেছিলেন সিংহভাগ জনতা। বিকেল ৫টায় পাড়ায় পাড়ায় বেজে ওঠে শঙ্খ-কাঁসর ঘণ্টা। সকলে ছাদে, বারান্দায় হাততালি দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে।
কোনও কোনও অতিউত্সাহী জনতা আবার থালা-বাসন নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। তাঁদের নিয়ে মিম-এর বন্যাও কম হয়নি।
আবার চা-প্রেমী কেউ কেউ একটু বিড়ম্বনাতেও পড়েন। ‘চা খাব না আমরা? আমরা খাব না চা?’
জনতা কার্ফু কী ট্রায়াল রান ছিল?
জনতা কার্ফু ঘোষণার সময়েই প্রধানমন্ত্রীর কথায় যেন লকডাউনের ইঙ্গিত ছিল। লকডাউনের নেট প্র্যাকটিস বলেও দাবি করেছিলেন কেউ কেউ। সেকথা যে সত্যি প্রমাণিত হয়, তা বলাই বাহুল্য।
এরপর ২৪ মার্চ ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর তা তিন দফায় বৃদ্ধিও করা হয়। লকডাউন শব্দটা যেন ধীরে ধীরে গা-সওয়া হয়ে যায় আমজনতার।
আবার হবে লকডাউন?
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রেল স্টেশন- সকলের মুখেই এখন এই প্রশ্ন ঘুরছে। তার কারণও রয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল করোনা। দৈনিক ১০,০০০ সংক্রমণে নেমে এসেছিল সংখ্যা। কিন্তু, ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকেই বদলে গিয়েছে সেই ছবি।
রবিবার কেন্দ্র জানায়, একদিনে নতুন করে ৪৩.৮৪৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত ১৯৭ । ফলে করোনা যে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বলাই যায়। মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে পরিস্থিতি বেশ খারাপ।
গত দুই সপ্তাহে একাধিক রাজ্যের জেলা প্রশাসন তাই লকডাউনের পথেই হেঁটেছে। আবার লকডাউনের জল্পনা বাড়িয়েছেন মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও।
গত সপ্তাহে কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানায়, সামাজিক দূরত্বে নিয়ে সচেতনতার অভাবেই ফের বাড়ছে করোনা। বিয়েবাড়ির মতো সুপারস্প্রেডার ইভেন্টকেই দায়ী করেছেন নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা।
জনতা কার্ফুর এক বছর পর পরিস্থিতি হয় তো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। চলছে করোনা ভ্যাকসিনেশন। কিন্তু, এখনও যে পরিস্থিতি মোটেই নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো নয়, তা বলাই যায়।