সামান্য শরীর খারাপ হলেও হাসপাতালে না গিয়ে কালোজাদুর শরণাপন্ন হতেন গ্রামবাসীরা। যদি তিনি এগিয়ে না আসতেন, তাহলে সম্ভবত আজও সম্পূর্ণভাবে কালোজাদুর অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকত ওড়িশার সুন্দরগঢ় জেলার বরাগাঁওয়ের গর্গাদবহলের গ্রাম। এবার সেই আশাকর্মী মাতিলদা কুল্লুকে স্বীকৃতি দিল ফোর্বস ম্যাগাজিন। ভারতের ২১ জন প্রভাবশালী মহিলার তালিকায় জায়গা পেলেন তিনি।
যদিও কাজটা এতটা সহজ ছিল না। ১৫ বছর আগে যখন মাতিলদা কুল্লু প্রথমবার গ্রামে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে উপহাসের মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে দমে যাননি। হারিয়ে ফেলেননি আশা। বরং সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হলে মানুষ ভাবতেই পারতেন না যে হাসপাতালে যেতে হবে। যখন আমি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিতাম, তখন আমায় নিয়ে উপহাস করতেন। বর্ণবাদের জ্বালাও সইতে হয়েছে আমায়।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার পর আমি মানুষকে বোঝাতে পারি যে ওঝার পরিবর্তে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’
এমনিতে আর পাঁচজন আশাকর্মীর মতোই কাজের প্রবল চাপ থাকে মাতিলদার। ভোর পাঁচটায় শুরু হয় তাঁর দিন। চারজনের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করেন। খাইয়ে দেন গবাদি পশুদের। তারপর বেড়িয়ে পড়েন সাইকেল নিয়ে। সেই বাহনে করেই বাড়ি-বাড়ি ঘোরেন। সেই ব্যস্ততার মধ্যে একদল গ্রামবাসীর কাছে মসিহা হয়ে ওঠেন। মাতিলদা জানান, করোনাভাইরাসের দাপট শুরুর পর কাজের চাপ আরও বেড়েছে। রোজ করোনার উপসর্গ থাকা ৫০-৬০ জনের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ করি। তারপর স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সে বিষয়ে জানাই। গত বছর করোনা রোগীদের বিভিন্ন ভুল ধারণা থাকায় করোনা পরীক্ষা করতে ভয় পেতেন মানুষ।’
তবে সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মধ্যে পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম। মাতিলদা জানান, এত পরিশ্রমে সত্ত্বেও মাসিক মাত্র ৪,৫০০ টাকা দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের সময় এককালীন ২,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ব্যস, ওইটুকুই। এখন আবার সেই মাসে মাত্র ৪,৫০০ টাকা হাতে আসে।