মেঘালয়কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এবার দক্ষিণ ভারতে। ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের ভয়ঙ্কর পরিণতি।তেলাঙ্গানায় বিয়ের এক মাসের মধ্যেই নিখোঁজ হয়েছিলেন বর। তারপর খাল থেকে উদ্ধার হয় যুবকের দেহ। এরপরেই তদন্ত শুর হতেই পুলিশ জানতে পারে যে ওই ব্যক্তিকে তাঁর স্ত্রী হত্যা করেছে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে।তারপর তদন্তে যত এগোচ্ছে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাত্র এক মাস আগেই মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা সারতে গিয়ে স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুন করিয়েছিল সোনম রঘুবংশী। আর তাকে সাহায্য করেছিল সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহ ও তার বন্ধুরা। তারপরে এই ঘটনা যেন হানিমুন মিস্ট্রিকেই আবার মনে করিয়ে দিল। (আরও পড়ুন: ট্রেনের ভাড়া ছাড়াও ১ জুলাই থেকে আসবে আরও ৫ বদল, চাপ পড়বে পকেটে)
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৮ মে কুর্নুলের ঐশ্বর্যর (২৩) সঙ্গে তেলাঙ্গানার গাড়ওয়ালের পেশায় ল্যান্ড সার্ভেয়ার এবং নৃত্যশিল্পী তেজেশ্বরের (২৬) বিয়ে হয়। বিয়ের আগে ঐশ্বর্য তেজেশ্বরকে বলে, সে তাঁর প্রেমে পড়েছে। কিন্তু বিয়ের এক মাস পর ১৭ জুন আচমকা তেজেশ্বর নিখোঁজ হয়ে যান। এরপরেই তেজেশ্বরের পরিবার নববধূ ঐশ্বর্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ ওই মহিলা এবং তার মা সুজাতাকে আটক করে। এরপরেই আসল রহস্য উন্মোচন হয়। পুলিশ জানতে পারে, ঐশ্বর্যর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এক বিবাহিত ব্যক্তির। তিনি পেশায় একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। বিয়ের এক মাসের মধ্যেই ঐশ্বর্য প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তেজেশ্বরকে খুনের জন্য তারা তিনজনকে নিয়োগ পর্যন্ত করেছিল। ঐশ্বর্যর মা সুজাতা একই নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনে (এনবিএফসি) কাজ করতেন। সেই সূত্রেই মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয় ওই বিবাহিত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। (আরও পড়ুন: ভারতকে এস৪০০-এর বাকি দুই স্কোয়াড্রন কবে দেবে রাশিয়া? এল বড় আপডেট)
আরও পড়ুন-রিল বানাতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি! বেঙ্গালুরুতে ১৩ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু তরুণীর
জানা গেছে, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ঐশ্বর্য ও অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তিরুমল রাও জানিয়েছে, দু'জনে মিলে রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ডের মতোই তেজেস্বরকে খুন করতে চেয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, তেজেস্বরের সঙ্গে ঐশ্বর্য ঘুরতে যাবেন বাইকে। মাঝপথেই তেজেস্বরের উপর হামলা হবে। সেখানে তাঁকে করা হবে। এমনটা পরিকল্পনা থাকলেও, পরে আরও আলোচনা করে প্ল্যান বদলে ফেলে তারা। জেলা পুলিশ সুপার টি শ্রীনিবাস রাও এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে তিরুমল রাওকে শনাক্ত করেছেন। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ২৩ বছরের ঐশ্বর্য তেজেস্বরের বাইকে জিপিএস ডিভাইস লাগিয়ে দেয়। নিত্যদিন তাঁর যাতায়াতের সব খবর পেত সে। পাশাপাশি প্রতিবেশী যুবক মোহনকেও তেজেস্বরের উপর নজরদারি রাখতে বলেছিল। এই হত্যাকাণ্ডে আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের তালিকায় ঐশ্বর্য, তিরুমল, ঐশ্বর্যের মা, তিরুমলের বাবা, প্রতিবেশী যুবক ও তিনজন ভাড়াটে খুনি রয়েছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-পাককে নিয়ে বৈঠক করা চিনকে তাদের দেশে গিয়েই 'দায়িত্ব' মনে করালেন রাজনাথ)
আরও পড়ুন: অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা পাক মেজরের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন মুনির, বললেন...
তদন্ত শুরুর পর পুলিশ জানতে পারে, ঐশ্বর্যের মা সুজাতা একটি কোম্পানিতে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করত। সেখানকার ম্যানেজার তিরুমল রাওয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৬ সাল থেকে তিরুমল ও সুজাতার প্রেম শুরু হয়। মায়ের জায়গায় কাজ করতে যায় ঐশ্বর্য। ঠিক একইভাবে তিরুমলের সঙ্গে ঐশ্বর্যের প্রেম হয়। এদিকে, ২০১৯ সালে তিরুমল বিয়ে করে। সেই বিয়ের পরেও স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল তার। অন্যদিকে, মেয়ের প্রেমের কাহিনি শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সুজাতা। তড়িঘড়ি তেজেস্বরের সঙ্গে ঐশ্বর্যের বিয়ে ঠিক করে। আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিল ঐশ্বর্য। পরে ফিরে এসে বিয়ের জন্য তেজেস্বরকে জোরাজুরি করে। ১৮ মে তাদের বিয়েও হয়।পুলিশ জানিয়েছে, তেজেস্বরকে হত্যার জন্য তিরুমল ভাড়াটে খুনিদের খুঁজে বের করে। তিনজন ব্যক্তি তাঁর কাছে ঋণের জন্য এসেছিলেন। তিরুমল তাঁদের বলেছিল, তাঁরা যদি হত্যাকাণ্ডটি সফলভাবে শেষ করেন, তবে তাঁরা ঋণ পাবেন, সেই সঙ্গে আরও কিছু টাকা পাবেন। (আরও পড়ুন: ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-পাক-চিন, কী ছক কষছে ৩ দেশ? 'জোট' নিয়ে যা বলল ভারত)
আরও পড়ুন: নিজেকে 'নতুন বাংলাদেশের জনক' বানাতে গিয়ে শিষ্যদেরই ক্ষোভের মুখে ইউনুস
সেই কথা মতো তেজেস্বরকে জমি দেখাতে গাড়িতে তুলেছিল তিন যুবক। এরপর গাড়ির মধ্যে তার গলা কেটে, কুপিয়ে খুন করে দেহ মাঠের মধ্যে ছুড়ে ফেলে তারা। ভিডিওকলে তিরুমলকে মৃতদেহটিও দেখিয়েছিল। এরপর খালে দেহটি ফেলে পালিয়ে যায়। তদন্তকারীরা কিছু সিসিটিভি ফুটেজ পান। সেখানে একটি ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তেজেস্বরকে নিয়ে একটি গাড়িতে উঠছেন। গাদোওয়াল পুলিশের প্রধান টি শ্রীনিবাস রাও বলেন, ‘খুনিরা জমি জরিপের অজুহাতে তাঁকে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। ড্রাইভারের পাশের সিটে থাকা অবস্থায় তারা তাঁর মাথায় আঘাত করে, গলা কেটে দেয় এবং পরে পেটে ছুরিকাঘাত করে।’ তারা দেহটি গাড়ির সামনে থেকে পেছনে টেনে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের পোশাক রক্তে ভিজে গেলে তিরুমল রাও তাদের জন্য নতুন পোশাক কিনে দেয়।