নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনালাপে নিজের জোড়া মনোবাঞ্চা স্পষ্ট করে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের পরে হোয়াইট হাউসের তরফে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, ভারতকে আরও বেশি করে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম (অস্ত্রশস্ত্র) কেনার বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে আরও ‘ন্যায্য’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উপরে জোর দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও নির্দিষ্টভাবে সেই দুটি বিষয় নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে। নয়াদিল্লির বিবৃতিতে শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি এবং প্রতিরক্ষার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অতীতে ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’-ও বলেছেন ট্রাম্প
এমনিতে ট্রাম্প যে দুটি বিষয়ের উপরে নিজের মনোবাঞ্চা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তা অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতেও একাধিকবার সেই বিষয়গুলি উত্থাপন করেছেন ট্রাম্প। বিশেষত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প মাঝেমধ্যেই ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত থেকে আনা পণ্যের উপরে আমেরিকা যতটা শুল্ক চাপায়, তার থেকে অনেক বেশি হারে আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপরে কর ধার্য করে থাকে নয়াদিল্লি।
আরও পড়ুন: Putin Praises Trump: ২০২২-এ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধই হত না, দাবি পুতিনের!
এমনকী নিজের প্রথম দফার শাসনকালে ভারতের একটি তকমা বাতিল করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যেটার মাধ্যমে শুষ্ক ছাড়াই কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্য আমেরিকায় রফতানি করতে পারত ভারত। ২০১৯ সালের মার্চে মার্কিন প্রশাসনের তরফে তো বলা হয়েছিল, ‘বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা তৈরি করেছে ভারত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের উপরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
ভারতীয় পণ্যের উপরে চড়া শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, নির্বাচনী প্রচারের মধ্যেই মোদীকে ‘দারুণ’ লোক বলেও ভারতীয় পণ্যের উপরে চড়া হারে শুল্ক চাপানোর যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প, এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু করেননি। তবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নিজের মনোবাঞ্চা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তারইমধ্যে সম্প্রতি কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। বাণিজ্য ঘাটতি যাতে কমানো যায়, সেজন্য আমেরিকার থেকে নির্দিষ্ট কিছু কেনারও ইঙ্গিত দিয়েছে। এমনকী বাণিজ্যিক চুক্তি করা যায় কিনা, সে নিয়েও আলোচনা শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে।
আরও বেশি মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র কেনার উপরে জোর ট্রাম্পের
আর সেই বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানোর জন্য ভারতকে আরও বেশি করে আমেরিকায় তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে ট্রাম্প বলেছেন কিনা, সেটা হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি। বিবৃতিতে শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে আরও বেশি করে 'মেক ইন আমেরিকা' সরঞ্জাম কিনতে বলেছেন ট্রাম্প।
এমনিতে গত দু'দশকে আমেরিকার থেকে প্রচুর প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম কিনেছে ভারত। সম্প্রতি দু'দেশের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রিডেটর ড্রোন কেনারও চুক্তি হয়েছে। তারপরও ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি (প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম) নিয়ে আমেরিকার কিছুটা গোঁসা আছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। ওই মহলের মতে, বিশেষত রাশিয়া, ইজরায়েল, ফ্রান্সের মতো দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র উপরে জোর দেওয়ার ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না আমেরিকার। যা মোদী ও ট্রাম্পের কথোকথনের পরে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতেও কিছুটা ফুটে উঠেছে।