রাজায় রাজায় সংঘর্ষ। তাও আবার ভারতে। রাজশাসন উঠে গিয়েছে বহুকাল আগে। তারপরেও সিংহাসন নিয়ে রাজ পরিবারের বিবাদ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এই বিবাদকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল রাজস্থানের উদয়পুরে। রাজপ্রাসাদে ঢুকতে না দেওয়ায় একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি করল দুই গোষ্ঠী। ঘটনায় বেশ কয়েক আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গভীর রাত পর্যন্ত দুপক্ষের সংঘর্ষ চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: হলদিঘাটির যুদ্ধে হার হয়েছিল আকবরের? বিতর্ক উসকে মন্তব্য রাজনাথের
উদয়পুরে মহারানা প্রতাপের বংশধরদের মধ্যে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রাক্তন মহারানা এবং প্রাক্তন সাংসদ মহেন্দ্র সিং মেওয়ারের মৃত্যুর পরে তাঁর বড় ছেলে বিশ্বরাজকে তাঁর সমর্থকরা মেওয়ার রাজবংশের নতুন মহারানা হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। সোমবার চিতোরের ফতেহ নিবাস প্রাসাদে তাঁর জন্য রাজ তিলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সারাদেশের রাজপরিবারের বংশধরেরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাতে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। মহেন্দ্র সিং মেওয়ারের ভাই এবং বিশ্বরাজের কাকা অরবিন্দ সিং মেওয়ারের পরিবার উদয়পুরের সিটি প্যালেসের দরজা বন্ধ করে দেয় যাতে তারা ঐতিহ্যটি পালন করতে না পারে।
অন্যদিকে, চিতরগড়ে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের পর বিশ্বরাজ সিং মেওয়ার ঐতিহ্য অনুসারে ধুনি দেবতা দর্শনের জন্য উদয়পুরে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু, সিটি প্যালেসে যাওয়ার পথে ব্যারিকেড দেখতে পান। বিশ্বরাজের সমর্থকরা ব্যারিকেড সরিয়ে দেয়। ৩টি গাড়ি রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেই সময় দুপক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। উল্লেখ্য, সিটি প্যালেসটি অরবিন্দ সিং মেওয়ারের দখলে। অরবিন্দ সিং মেওয়ার মহারানা মেওয়ার চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান। অরবিন্দ সিং মেওয়ার একটি নোটিশ জারি করে জানান, বিশ্বরাজ সিং সিটি প্যালেস ট্রাস্টের সদস্য নন। তাই তাকে সিটি প্যালেসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, মেওয়ারের মহারানা নিজেকে দেওয়ান মনে করেন। একলিংজি মন্দিরে পুরোহিত মহারানাকে একটি লাঠি হস্তান্তর করেন, যেটি হল শাসনের লাঠি। একভাবে মহারানার স্বীকৃতি পাওয়া যায় এই মন্দির থেকেই। সেই মতো চিতোরে রাজ তিলকের পর মন্দিরে যেতে চেয়েছিলেন বিশ্বরাজ সিং। একলিংজি মন্দিরও এই ট্রাস্টের অধীনে। তাই অরবিন্দ সিং মেওয়ার মন্দিরে বিশ্বরাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, মহারানা প্রতাপের পর মেওয়ার রাজবংশে ১৯ জন মহারানা হয়েছেন। ১৯৫৫ সালে ভগবত সিং মেওয়ারের মহারানা হন। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। বড় মহেন্দ্র সিং মেওয়ার, ছোট ছেলে অরবিন্দ সিং মেওয়ার এবং মেয়ে যোগেশ্বরী। মহেন্দ্র সিং মেওয়ারের ছেলে বিশ্বরাজ সিং। তিনি আবার বিজেপি বিধায়ক। তাঁর স্ত্রী মহিমা কুমারী রাজসমন্দের বিজেপি সাংসদ।