জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিকদের সন্ধান করছে প্রশাসন। তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠাচ্ছে। ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দেওয়া সমস্ত ধরনের ভিসা বাতিল করেছিল এবং তাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এদিকে, গত কয়েক দশক ধরে ভারতে বসবাস করছেন এমন কিছু লোককেও পাকিস্তানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক প্রাক্তন পুলিশ কনস্টেবল। নাম ইফতিখার আলি। (আরও পড়ুন: সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দেখা যায়নি, দাবি কংগ্রেসের চান্নির, BJP বলল- পাকিস্তান যান…)
আরও পড়ুন: রাওয়ালপিন্ডিতে হঠাৎ সক্রিয় মুনির! সেই রাতেই LoC-তে পাক সেনাকে কড়া জবাব ভারতের
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশে ২৭ বছর কাজ করেছেন কনস্টেবল ইফতিখার আলি। তাঁকেই সম্প্রতি ভারত ছাড়ার নোটিস দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২৬ এপ্রিল একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে জানান যে তাঁকে এবং তার আট ভাইবোনকে পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। তাই তাঁকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই শুনে স্বভাবতই ৪৫ বছর বয়সি ইফতিখার আলির পায়ের নীচে মাটি সরে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফতিখার আলি বলেছিলেন, 'আমি মরে যাব, কিন্তু পাকিস্তানে যাব না।' (আরও পড়ুন: সিন্ধু প্রবাহে কমছে জল, বিশ্বব্যাঙ্কে নালিশ করেও কি তৃষ্ণা মিটবে পাকিস্তানের?)
আরও পড়ুন: সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেফতারির জবাব অপহরণ! পরে বাংলাদেশিদের 'দম' বোঝাল BSF
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ২৯ এপ্রিল ইফতিখার ও তাঁর আট ভাইবোনকে ভারত ছাড়ার নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিন দিনের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠানো থেকে বিরত রাখে। ইফতিখারের দায়ের করা পিটিশনে তিনি বলেছিলেন যে তাঁর বাবা ফখরুদ্দিন ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে ভারতের নাগরিক ছিলেন। (আরও পড়ুন: 'দিঘার মন্দির চমৎকার', বললেন পুরীর সেবায়েত, 'স্বাগত' জানালেন ওড়িশার BJP সাংসদ)
আরও পড়ুন: ইউনুসের এক ভুলেই জাঁতাকলে বাংলাদেশ, ভারতের পদক্ষেপে কান্নাকাটি বাংলাদেশিদের
ইফতিখার আলি এবং তাঁর আট ভাইবোন - বড় ভাই জুলফিকার আলি (৪৯), মহম্মদ শফিক (৬০) ও মহাম্মদ শাকুর (৫২); এবং তাঁর বোন শাজিয়া তাবসাম (৪২), কাউসার পারভিন (৪৭), নাসিম আখতার (৫০), আকসির আখতার (৫৪) এবং নসরুন আখতার (৫৬) এখন গ্রামে ফিরে এসেছেন। এদিকে ইফতিখার দেশ ছাড়ার নোটিশ পেলেও তাঁর স্ত্রী বা তিন নাবালক সন্তানকে এই নোটিস দেওয়া হয়নি। কারণ তাঁরা সকলেই ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পারিবারিক ইতিহাস
ইফতিখার আলি পুঞ্চ জেলার সালওয়াহ গ্রামের বাসিন্দা। দুই বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারতে আসেন তিনি। সালওয়াহ গ্রামে তাঁর বাবার ১৭ একর জমি ও একটি বাড়ি ছিল। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখার আশপাশের এলাকা দখল করলে ফখরুদ্দিনকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ত্রালখাল ক্যাম্পে সপরিবারে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের আরও ছয়টি সন্তান ছিল। স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৩ সালে পুরো পরিবার সালওয়ায় ফিরে আসে।
ইফতিখার ১৯৯৮ সালে পুলিশে যোগ দেন। রিয়াসি জেলার গুলাবগড়ে তাঁর প্রথম পোস্টিং হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি কাটরায় পোস্টিং পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২৬ এপ্রিল পুঞ্চের ডেপুটি কমিশনারের পাঠানো 'ভারত ছাড়ার' নোটিস তাঁর কাছে পৌঁছলে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। তাঁর বড় ভাই জুলফিকার আলিকে সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন তিনি। সেই সময় দুই ভাইকে বেলিচরণে আটক করে পুলিশ।
কী বলল আদালত?
আবেদনকারীদের নামে বা তাঁদের বাবার নামে কোনও সম্পত্তি আছে কিনা তা জানতে চেয়ে ডেপুটি কমিশনারকে হলফনামা জমা দিতে বলেছে আদালত। তা দেখে আদালত বলে, 'রাজস্ব রেকর্ড পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে আবেদনকারীরা পাকিস্তানি নাগরিক নন।'
ভারত ছাড়ো নোটিস কেন?
আবেদনকারীরা বলেছিলেন যে তারা ভারতে অনুপ্রবেশ করেনি তবে ফিরে আসার পরে তারা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছিল যে তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসাবে গণ্য করা উচিত। যদিও সেই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত জানিয়েছিল, নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই নিতে পারে। তাদের পরিবার অনুসারে, তারা ১৯৯৭ সালে (ইফতিখার) এবং ২০০০ সালে (অন্যান্য ভাইবোন) রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ইফতিখার বলেছেন যে এই কঠিন সময়ে তিনি তার বিভাগ অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন।