'আমি চাই, ওরা যেন শাস্তি পায়!' নিজের শেষ ভিডিয়ো বার্তায় এটাই ছিল সুজয় মাইতির শেষ ইচ্ছা! তাঁর পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও আত্মীয়দের দাবি, শেষ এই ভিডিয়ো বার্তা পাঠিয়েই আত্মঘাতী হন ওই যুবক। নিজের মৃত্যুর জন্য কাঠগড়ায় তুলে যান নিজের প্রেমিকা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
সুজয় মাইতি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বাসিন্দা ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য অনুসারে - পাশের এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। তাঁদের এই প্রেম নিয়ে কোনও লুকোছাপাও ছিল না। দুই পরিবারের সদস্যরাই বিষয়টি জানতেন। এমনকী, সুজয় ও তাঁর প্রেমিকা একে অপরের বাড়িতেও যাতায়াত করতেন।
কিন্তু, হঠাৎই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। বিস্তারিত জানা না গেলেও সুজয়ের পরিবারের দাবি, যুগলের নিজেদের মধ্যেই কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। যে কারণ সুজয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমিকা সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকী, তিনি তাঁর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেও সুজয়কে ব্লক করে দেন।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সুজয় কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি নানাভাবে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাতে কোনও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে সুজয় তাঁর প্রেমিকার দাদার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে কিছু ছবি দেখান। জানা গিয়েছে, সেই ছবিগুলি সুজয় ও তাঁর প্রেমিকার ঘনিষ্ঠ কিছু মুহূর্তের! যা তাঁরা সম্পর্কে থাকাকালীন তুলেছিলেন।
এতে হিতে বিপরীত হয়। সুজয়ের প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সুজয় ওই ছবিগুলি অস্ত্র করে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়। পুলিশ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মিটমাট করার চেষ্টা করে। থানায় দুই পরিবারের সদস্যদের ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে সুজয়ের প্রেমিকা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি আর সুজয়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না। এতে সুজয় মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন।
এসবের মধ্যেই সম্প্রতি সুজয় জানতে পারেন, তাঁর প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এই বিষয়টি সুজয় একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। সম্ভবত এরপরই তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। এরপর সুজয় একটি ভিডিয়ো করেন। সুইসাইড নোটের মতোই সেই ভিডিয়োয় সুজয় জানিয়ে যান, তিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন।
নিজের মৃত্যুর জন্য নিজের প্রেমিকা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে যান সুজয়। তিনি তাঁদের সকলের শাস্তি দাবি করেন। বলেন, 'আমি চাই, ওরা যেন শাস্তি পায়।' এরপর এই ভিডিয়োটি নিজের আত্মীয়, বন্ধুদের পাঠিয়ে দেন সুজয়। দাবি করা হচ্ছে, এই ভিডিয়ো বার্তা সংশ্লিষ্টদের পাঠানোর পরই আত্মহত্যা করেন সুজয়।
ঘটনা যে এভাবে এত ভয়ঙ্কর মোড় নেবে, তা সুজয়ের পরিবারের সদস্য বা প্রিয়জনেরাও বুঝতে পারেননি। তাঁরা সুজয়ের এই চরম সিদ্ধান্তে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। এলাকাবাসীও এক তরুণের এমন পরিণতিতে শোকস্তব্ধ। পুলিশ ঘটনার তদন্তে শুরু করেছে।