বিগত দিনে কানাডায় থাকা শিখদের ভোটব্যাঙ্ক কাজে লাগাতে খলিস্তানিদের প্রশ্রয় দেওয়া কানাডার রাজনীতির রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সেই রীতি আপাতত ছেদ পড়ছে। উল্লেখ্য, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি শুক্রবার ফোন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বর্তমানে কানাডা জি-৭ গোষ্ঠীর প্রধান। বিগত বছরগুলিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ধারাবাহিক ভাবে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। তবে এবারে কানাডার এই আমন্ত্রণ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এদিকে কানাডায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণের পক্ষেই মত দিলেন সেই দেশের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভর। (আরও পড়ুন: মেইতেই নেতাদের গ্রেফতারির খবরে আগুন জ্বলল মণিপুরে, ৫ জেলায় বন্ধ হল ইন্টারনেট)
প্রসঙ্গত, খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের জেরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বিগত কয়েক বছরে। এই সবের মাঝেও মোদীকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানালেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। এই নিয়ে কনজারভেটিভ প্রধানকে সম্প্রতি প্রশ্ন করেন সেই দেশের সাংবাদিকরা। জবাবে মার্ক কার্নির পদক্ষেপকে সমর্থনই করলেন পিয়েরে পোইলিভর। অকপটে তিনি বললেন, 'আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমাদের প্রযুক্তি বিক্রি করতে হবে। তাই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।'
এর আগে মোদীকে কানাডায় আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন মার্ক কার্নি। সেই সময় তাঁর স্পষ্ট জবাব ছিল, 'কিছু দেশের এইআলোচনার টেবিলে থাকা উচিত... ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি, সবচেয়ে জনবহুল দেশ।' এদিকে মোদীকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মার্ক কার্নির কথা হয়েছে কি না তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। সেই প্রশ্নের জবাবে সংক্ষিপ্ত জবাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এই নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কোনও কথাই হয়নি। এদিকে মার্ক কার্নিকে নিজ্জর কাণ্ডের উল্লেখ করে প্রশ্ন কা হয়েছিল, এই বিতর্ক সত্ত্বেও কেন মোদীকে কানাডায় আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, জবাবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, 'আইনি প্রক্রিয়া নিজের পথে চলছে, সেই নিয়ে এখন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।' সব শেষে মার্ক কার্নি স্পষ্ট করে বলেন, 'জি-৭ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
এর আগে গত পাঁচটি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এবছর কানাডা জি-৭ গষ্ঠীর মাথায় থাকায় মোদীকে শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা চলছিল। এর আগে জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। খলিস্তানিদের কার্যত মাথায় তুলেছিল ট্রুডোর সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকতে শিখ ভোটব্যাঙ্ককে কাছে পেতেই খলিস্তানিদে এই প্রচ্ছন্ন মদত দেওয়া হচ্ছিল। তবে সেই ট্রুডো এখন আর প্রধানমন্ত্রী পদে নেই। তাঁরই দলের মার্ক কার্নি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দায়িত্ব গ্রহণ করেই। এই আবহে মোদীকে গত ৬ জুন ফোন করেছিলেন তিনি।