ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার করৌন্দি পঞ্চায়েতের তিররা গ্রাম। এই গ্রামেরই বাসিন্দা সাহু পরিবার। যে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটি এখন ঠিক কী অবস্থায় রয়েছেন, জানা নেই বাড়ির বাকি সদস্যদের। তাঁরা শুধু ঈশ্বরের নামে প্রার্থনা করে চলেছেন, যেন প্রিয়জন সুস্থ শরীরে নিজের ঘরে ফিরে আসে!
শনিবার সকালে তেলঙ্গনার শ্রীশৈলমে সুড়ঙ্গ ধসে পড়ার ঘটনায় যে আট শ্রমিক আটকে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঝাড়খণ্ডের তিররা গ্রামের এই সাহু পরিবারের কর্তা সন্তোষ সাহু। এছাড়াও, শনিবারের ওই ঘটনায় সুরঙ্গে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের আরও তিন শ্রমিক রয়েছেন। এঁরা হলেন - অনুজ সাহু, জগতা খেস এবং সন্দীপ সাহু।
এর পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের দু'জন, ঝাড়খণ্ডের চারজন এবং জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাবের একজন করে পরিযায়ী শ্রমিক তেলঙ্গনার ওই সুরঙ্গ দুর্ঘটনায় ফেঁসে রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ শুরু হলেও এখনও তাঁদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে সময় যত গড়াচ্ছে, প্রিয়জনকে নিয়ে উদ্বেগও ততই বাড়ছে পরিবারগুলির।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সন্তোষের ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে। সেই বাড়িতে দারিদ্র্যের ছাপ সর্বত্রই স্পষ্ট। বাড়ির সদস্য বলতে রয়েছেন, সন্তোষের স্ত্রী সন্তোষী দেবী। আর তাঁদের তিন সন্তান। তিনজনই নেহাত বাচ্চা - দুই মেয়ে রিমা আর রাধিকা, এবং একমাত্র ছেলে ঋষভ।
তারা জানে না, তাদের বাবা কেমন আছে। শুধু জানে, বাবার ভীষণ বিপদ! যে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে তাদের উপরেও। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তরে সন্তোষের মেয়েরা বলে, 'আমরা গরিব। সংসার চালাতে বাবা তেলঙ্গনায় কাজ করতে গিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে খবর আসে, বাবা আটকে পড়েছে সুড়ঙ্গে। সরকারের কাছে আমাদের প্রার্থনা, বাবাকে সশরীরে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।' বস্তুত, সন্তোষের গোটা গ্রামের মানুষই এই প্রার্থনা করছে।
এদিকে, শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, এখনও পর্যন্ত সুরঙ্গের ভিতর আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি। আগেই বিভিন্ন উদ্ধারকারী দলের (এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-সহ) সাহায্যে আটক শ্রমিকদের সুরঙ্গ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে এখনও কোনও সাফল্য পাওয়া যায়নি। ফলত, সেনাবাহিনীরে উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে।
তেলঙ্গনার নগরকুর্নুলের জেলাশাসক বি সন্তোষ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, 'এখনও পর্যন্ত আমরা আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি। উদ্ধারকারীরা ভিতরে ঢুকবেন এবং বিষয়টা দেখবেন। আর তারপরই আমরা কিছু বলতে পারব।'