অবশেষে ৩৯ দিন পর কেরলের তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দিল ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির একটি এফ-৩৫বি লাইটনিং টু যুদ্ধবিমান।গত ১৪ জুন থেকে তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ছিল এই যুদ্ধবিমানটি। মার্কিন লকহিড মার্টিন নির্মিত এই পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটারটির দাম ১১০ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯২০ কোটি টাকারও বেশি।
কেরল বিমানবন্দরের একজন মুখপাত্র বলেন, এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমানটি সোমবার হ্যাঙ্গার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিমানটির টেক অফার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে তিনি এর কারিগরি ত্রুটি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। জানা গেছে, ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক এবং লজিস্টিক ত্রুটির কারণের এতদিন কেরলে আটকে ছিল। মঙ্গলবার এফ-৩৫বি লাইটনিং টু যুদ্ধবিমানের রওনা হওয়ার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, তারা ১৪ জন ইঞ্জিনিয়ারের একটি দল ‘এফ-৩৫বি’ বিমানটির মূল্যায়ন ও মেরামতের জন্য তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দলটি বিমান সরানো ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিল। সে সময় একটি ভিডিতে দেখা যায়, আটকে পড়া যুদ্ধবিমানটিকে তার নির্ধারিত জায়গা থেকে হ্যাঙ্গারের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।এর আগে বিমানটি বিমানবন্দরের চার নম্বরে বেস রাখা ছিল। এর আগে গুঞ্জন ওঠে, যদি প্রযুক্তিবিদরা বিমানটি মেরামত করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেটিকে খুলে বড় ধরনের কার্গো বিমানে-যেমন সি-১৭ গ্লোবমাস্টার পরিবহন বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিদর্শনের পর, ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররা বিমানটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে মনে করেন। যুদ্ধবিমানটি মেরামতের সময়, ভারতীয় বায়ুসেনা ব্রিটিশ দলকে সহায়তা করে।
ঘটনার সূত্রপাত
সম্প্রতি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস থেকে ওড়া এই এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমানটি ভারত মহাসাগরে যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছিল। বিমানটি কেরল উপকূল থেকে আনুমানিক ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থানরত ক্যারিয়ার থেকে রওনা দিয়েছিল। রাডার ডেটা ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি স্কোয়াক ৭৭০০ জরুরি সংকেত পাঠায়, যার অর্থ হল গুরুতর বিপদ। এরপরই তড়িঘড়ি তিরুঅনন্তপুরমে জরুরি অবতরণে অনুমতি দেওয়া হয়।প্রথমে জানা গিয়েছিল, জ্বালানি কমে যাওয়ায় জরুরি অবতরণ হয়েছে। পরে অবশ্য ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদরা জানান, বিমানের হাইড্রলিক সিস্টেমে ত্রুটি ধরা পড়েছে, যার জেরে তা আর টেক-অফ করতে পারছে না।
ভারতীয় বায়ুসেনা জরুরি অবতরণের পর পরিকাঠামোগত সবরকম সহায়তা করে, এমনকি বিমানে জ্বালানি ভরাও হয়।ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ রক্ষণাবেক্ষণ দল সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। যুদ্ধবিমানটি লকহিড মার্টিন নির্মিত এবং এটি সংক্ষিপ্ত রানওয়ে থেকে উড়তে ও উল্লম্বভাবে অবতরণ করতে পারে, যাকে স্টোভল প্রযুক্তি বলে। এর স্টেলথ ক্ষমতা রয়েছে, অর্থাৎ রাডারে ধরা পড়ে না সহজে। এই বিমান ন্যাটো-ভুক্ত অনেক দেশ, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস ব্যবহার করে।