কয়েকদিন আগেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বার্তা দিচ্ছিল চিন। তখন আমেরিকার সঙ্গে তাদের বাণিজ্য যুদ্ধ চলছিল। এরই মাঝে অবশ্য সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ঘটে যায় নৃশংস হিন্দু নিধনের ঘটনা। সেই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে চিন বিবৃতি জারি করেছে ঠিকই। তবে গতকাল তারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান আমাদের সর্বক্ষণের বন্ধু। ভারতের বিরুদ্ধেও যে তারা পাকিস্তানের সঙ্গেই দাঁড়াবে, তাও স্পষ্ট করেছে বেজিং। তবে এই প্রতিশ্রুতি কি শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে নাকি ব্যক্তিগত স্বার্থে? আসলে গিলগিট বালতিস্তান হয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে বালোচিস্তানের গোয়াদর বন্দর পর্যন্ত চলে গিয়েছে চিনের স্বপ্নের প্রকল্প চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর বা সিপেক। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অঙ্গ এই সিপেক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আফ্রিকা থেকে পণ্য খুব সহজেই পাকিস্তান দিয়ে নিজের দেশে নিয়ে যেতে পারে চিন। এর জন্যে ভারত সাগর ঘুরে দক্ষিণ চিন সাগরে যেতে হয় না তাদের। তবে ভারত যদি আদৌ পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়, তাহলে এই প্রকল্পে তার আঁচ পড়তে বাধ্য। (আরও পড়ুন: স্তব্ধ সিন্ধু প্রদেশ, জল নিয়ে 'গৃহযুদ্ধে' ঝরল রক্ত, সংঘর্ষ পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের)
আরও পড়ুন: 'দ্বিজাতি তত্ত্বে' জন্মানো পাকিস্তানে ঠাঁই হয়নি দেশের নাম দেওয়া পঞ্জাবি লেখকেরই!
আরও পড়ুন: 'গুলি করুন, কিন্তু দেশ থেকে বের করে দেবেন না', কাতর আর্তি পাকিস্তানির
চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে এমনিতেই চিরকাল কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ভারত। পাক অধিকৃত গিলগিট বালতিবস্তান হল লাদাখের অংশ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর হল জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ। এই আবহে এই প্রদেশগুলি দিয়ে চিনের সড়ক চলে যাওয়ায় বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের স্পষ্ট বার্তা, এটা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিষয়। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই অর্থনৈতিক করিডরটি পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরকে চিনের জিনজিয়াং অঞ্চলের কাশগরের সঙ্গে যুক্ত করছে। আর বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যত ভারতকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে চিন। তবে ভারত এখন পাকিস্তানকে 'শিক্ষা' দিতে গেলে কপালে হাত পড়বে চিনের। তাই কি পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াচ্ছে চিন? নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে রক্ষা করতেই ভারতের ওপর পালটা চাপ সৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করতে পারে চিন। (আরও পড়ুন: ভারতে কোন কোন পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে সরকার? রইল পুরো তালিকা)
আরও পড়ুন: অরুণাচলের জঙ্গলের আগুনে মুখ পুড়ল পাকিস্তানের, সেই পোড়া মুখে আবার ঝামা ঘষল ভারত
আরও পড়ুন: ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে মুখ খুলল মার্কিন বিদেশ দফতর, কী আহ্বান আমেরিকার?
এই আবহে গতকাল পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে ফোনালাপের পরে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই জানান, নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটার উপরে নজর রাখছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে দু'পক্ষেরই সংযম বজায় রাখা উচিত বলে দাবি করেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, চিনা বিদেশমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘বন্ধু’ পাকিস্তান সন্ত্রাস-বিরোধী পদক্ষেপ করে। আর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ইসলামাবাদের যে উদ্বেগ আছে, সেটা তাঁরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে চিন। ওয়াং বলেন, 'সন্ত্রাস-বিরোধী দৃঢ় পদক্ষেপে চিন সর্বদা পাকিস্তানকে সমর্থন করে আসছে। অত্যন্ত ভালো বন্ধু এবং সবসময়ের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের যুক্তিসংগত উদ্বেগের বিষয়টি অনুভব করতে পারে। আর পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্বার্থরক্ষায় সেই দেশকে সমর্থন করে চিন।'