হামাসের সমর্থনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ভারতীয় ছাত্রী রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের ভিসা প্রত্যাহার করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন রঞ্জনী শ্রীনিবাসন। তাঁর স্টুডেন্ট ভিসা নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি নিজে মার্কিন মুলুক ছেড়ে চলে এসেছেন। এবার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই ভারতীয় ছাত্রী।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাক্ষাৎকারে শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন, তিনি কখনও ভাবতে পারেননি যে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এভাবে হতাশ করবে। তাঁর কথায়, 'আমি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর কাটিয়েছি। সেখানে মাঝে মাঝে সপ্তাহে ১০০ ঘন্টা কাজ করেছি। আমি কখনও ভাবিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে এভাবে হতাশ করবে। কিন্তু তা হয়েছে। তবে শ্রীনিবাসন এখনও আশাবাদী যে বিশ্ববিদ্যালয় তার আবেদন বিবেচনা করবে এবং তাঁকে পুনর্বহাল করবে। ভারতীয় ছাত্রী আরও বলেন, 'আমি আশা করছি কলম্বিয়ার হুঁশ ফিরবে এবং আমাকে পুনরায় ভর্তি করবে। আমার পিএইচডি করার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, এবং যা বাকি আছে, তার জন্য আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকারও প্রয়োজন নেই। তাই আমি কলম্বিয়াকে এটি করার জন্য আবেদন করছি।'
রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের কাহিনী
প্যালেস্টাইনের সমর্থনে এবং গাজায় ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। নিউ ইয়র্ক শহরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অবস্থান-বিক্ষোভ এবং তার সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। সেই কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত পড়ুয়া ছিলেন শ্রীনিবাসন। তিনি আহমেদাবাদের সিইপিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসাবে সক্রিয় ওই ভারতীয় ছাত্রী। তিনি ওয়াশিংটনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি দফতর জানিয়েছে, রঞ্জনী ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ হামাসের সমর্থনে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি সক্রিয় ভাবে ওই আন্দোলনে অংশ নেন। এ জন্য গত ৫ মার্চ ছাত্রীর স্টুডেন্ট ভিসা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তারা ওই ছাত্রীর কর্মকাণ্ডে নজর রেখেছে। তিনি যে আন্দোলনের অংশ ছিলেন, তার প্রমাণ হিসাবে ভিডিও দফতরের কাছে রয়েছে। এবং তার পরেই ছাত্রী স্বেচ্ছায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন। অর্থাৎ, সামরিক বিমানে উঠিয়ে নির্বাসিতদের দেশে ফেরানোর ঝুঁকি এড়াতেই ওই পদক্ষেপ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশোনার জন্য ভিসা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। আপনি যখন সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কথা বলেন তখন সেই বিশেষাধিকার প্রত্যাহার করা উচিত এবং আপনার এই দেশে থাকা উচিত নয়। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী, যিনি সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, তিনি সিবিপি হোম অ্যাপ ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়েছেন দেখে আমি আনন্দিত।'