আমাদের মাতৃভাষা তেলুগু। কিন্তু জাতীয় ভাষা হিন্দি। হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে বিতর্কের মাঝেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনকে নিশানা করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তামিলনাড়ু। জাতীয় শিক্ষানীতি সে রাজ্যে গ্রহণ করা হয়নি। হিন্দি আগ্রাসনের এই বিতর্কের মাঝেই এবার মুখ খুললেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। এনডিএ শরিক টিডিপি প্রধান গত শুক্রবার অন্ধ্র্রপ্রদেশ বিধানসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় জানান যে, ভাষা জ্ঞানের পরিমাপের চেয়েও যোগাযোগের একটি হাতিয়ার।
নিজের অবস্থান সম্পর্কে চন্দ্রবাবু বলেন, 'ভাষা ঘৃণা করার মতো কিছু নয়। আমাদের মাতৃভাষা তেলুগু। জাতীয় ভাষা হিন্দি। আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি। আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য আমাদের যতটা সম্ভব ভাষা শেখা উচিত, তবে আমাদের মাতৃভাষাকে কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়।' হিন্দি প্রসঙ্গে তিনি যুক্তি দেন যে, 'ভাষা শেখা দিল্লি এবং দেশের অন্যান্য অংশে যোগাযোগের জন্য উপকারী হবে। আমরা যদি হিন্দির মতো একটি জাতীয় ভাষা শিখি, এমনকি যদি আমরা দিল্লিতে যাই, তাহলে সাবলীলভাবে কথা বলা সহজ হবে।' অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'অপ্রয়োজনীয় রাজনীতি করে ভাষা শেখার ব্যবহারিক সুবিধাগুলিকে দমিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। সকলকে বুঝতে হবে, এই অপ্রয়োজনীয় রাজনীতির পরিবর্তে, আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে যোগাযোগের জন্য যত বেশি ভাষা শেখা যায়।'
চন্দ্রবাবু আরও জোর দিয়ে জানান, 'যারা তাদের মাতৃভাষার জন্য গর্ব করে তারা বিশ্বব্যাপী সাফল্য অর্জন করে। ভাষা যোগাযোগের একটি মাধ্যম। ভাষা দিয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায় না। যারা তাদের মাতৃভাষা শিখেছে এবং গর্বের সঙ্গে কথা বলে তাঁরাই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শীর্ষ পদে বসে আছেন। আমাদের মাতৃভাষা শেখা সহজ। আমি এই বিধানসভায়ও বলছি।' মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রয়োজনে জাপানি বা জার্মানের মতো অতিরিক্ত ভাষা শেখার সুবিধা দেবে, যাতে ব্যক্তিদের জীবিকা নির্বাহের সম্ভাবনা উন্নত করা যায়।
সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণও জাতীয় শিক্ষা নীতি এবং হিন্দি আরোপ বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ১৪ মার্চ জনসেনা পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে পবন কল্যাণ সমস্ত ভারতীয় ভাষার গুরুত্ব রক্ষা করেও প্রশ্ন তোলেন যে, তামিলনাড়ু যদি ভাষার বিরুদ্ধে থাকে তাহলে তামিল চলচ্চিত্র কেন হিন্দিতে ডাব করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন যে, যে কোনও ভাষাকে ঘৃণা করার মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কল্যাণের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ প্রকাশ রাজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা এবং ভাষাটিকে অপছন্দ করার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করে বলেন। বলেন, 'আমাদের উপর তোমার হিন্দি চাপিয়ে দিও না, বলা মানে অন্য ভাষাকে ঘৃণা করা নয়। এটি আমাদের মাতৃভাষা এবং আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে রক্ষা করার বিষয়।'