১২ জুন আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘিরে তদন্ত চলছে।ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ ঘিরে সন্দেহ জোরাল হচ্ছে। এই আবহে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বোয়িং যৌথ ভাবে জানিয়েছে, ওই সুইচগুলির লক ব্যবস্থা নিরাপদ।রয়টার্সের হাতে আসা নথি এবং বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত চারটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার অনুযায়ী, উড়ান শুরুর পরে এক পাইলট অপরকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন জ্বালানি কেটে দেওয়া হল। জবাবে অপর পাইলট জানান, তিনি তা করেননি। ঠিক কী ভাবে দু’টি ফুয়েল সুইচ একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল,প্রাথমিক রিপোর্টে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ জুলাই এফএএ একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায়, যা এসেছে সেই প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের পরেই। যেখানে গত মাসে ঘটে যাওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষের। তদন্তে প্রশ্ন উঠেছিল ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচ নিয়ে।
আরও পড়ুন-কলকাতায় তৈরি হচ্ছে তাবড় এই যুদ্ধাস্ত্র! পরীক্ষায় করতে আসছে ইজরায়েল-Report
এফএএ ওই নথিতে জানায়, 'যদিও ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচের ডিজাইন এবং লকিং ফিচার একাধিক বোয়িং মডেলে একই রকম, এফএএ মনে করে না যে এটি কোনও এমন ধরনের সমস্যা যা নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করে। তাই বোয়িংয়ের কোনও মডেলের জন্য এয়ারওয়ার্দিনেস ডিরেক্টিভ জারির প্রয়োজন নেই।' এই নিয়ে মন্তব্য চাইলে এফএএ জানায়, তারা ওই বিজ্ঞপ্তির বাইরেও কিছু বলার নেই।বোয়িংও, গত ক’দিনে বিমান সংস্থাগুলোর উদ্দেশে পাঠানো মাল্টি-অপারেটর মেসেজে-এ, এফএএ-এর সেই বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করেছে। দু’টি সূত্র জানায়, বোয়িং কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেনি। বোয়িংয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা জানায়, এফএএ-এর বক্তব্যেই সব রয়েছে।
এদিকে, এদিকে ভারতের এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো যেটি ওই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে, তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে ২০১৮ সালের একটি এফএএ পরামর্শের। সেখানে একাধিক বোয়িং মডেলের (যার মধ্যে ৭৮৭-ও রয়েছে) ফুয়েল কাটঅফ সুইচের লকিং ফিচার ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, তা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছিল। যদিও এটি বাধ্যতামূলক ছিল না।তদন্তে আরও উঠে এসেছে, এয়ার ইন্ডিয়া এফএএ-এর ২০১৮ সালের ওই পরামর্শমতো পরীক্ষা করেনি, কারণ সেটি ‘আবশ্যিক’ নয় বলে গণ্য করা হয়েছিল। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, বিমান ও ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে সমস্ত প্রযোজ্য এয়ারওয়ার্দিনেস ডিরেক্টিভ এবং সার্ভিস বুলেটিন মেনে চলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-কলকাতায় তৈরি হচ্ছে তাবড় এই যুদ্ধাস্ত্র! পরীক্ষায় করতে আসছে ইজরায়েল-Report
অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের ভারতীয় শাখা এয়ারলাইন পাইলট্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এএলপিএ) একটি বিবৃতিতে স্পষ্ট জানায়, পাইলটের ভুল ধরে নেওয়ার প্রবণতা তারা মানে না, এবং তদন্ত যেন তথ্যনির্ভর ও ন্যায্য হয়, তার দাবি জানায়। এএলপিএ-র প্রেসিডেন্ট স্যাম থমাস বলেন, 'পাইলটদের সংস্থা হিসেবে আমাদের এই তদন্তে অন্তত পর্যবেক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।' এক্স-এ প্রকাশিত এক চিঠিতে এএলপিএ জানায়, ২০১৮ সালের এফএএ পরামর্শে ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ গেট সম্পর্কিত সম্ভাব্য যান্ত্রিক ত্রুটির ইঙ্গিত ছিল, যা এই দুর্ঘটনার সূত্র হতে পারে। এদিকে, দুইজন মার্কিন বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এএলপিএ-র পর্যবেক্ষক হওয়ার অনুরোধকে সমর্থন করেছেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্টে পাইলট দোষী এমন কোনও পক্ষপাত দেখা যায়নি। এএলপিএ-র প্রাক্তন প্রতিনিধি তথা পাইলট জন কক্স জানান, এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো -এর রিপোর্ট উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ মনে হয়েছে।