এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার হাতে ছিল এই বোমা। সম্প্রতি ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়ে ইরানের ফোর্দো পরমাণু পরিকাঠামোয় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ দিয়ে আঘাত হেনেছিল যুক্তরাষ্ট্র।এটি এমন একটি বোমা যা মাটির অনেক নীচে থাকা শত্রুপক্ষের বাঙ্কার ভেদ করে ভিতরে আঘাত করতে সক্ষম। এবার সেই ‘বাঙ্কার বাস্টার--র সঙ্গে যোগ হতে চলেছে কলকাতার নাম। নয়া দিল্লি সূত্রে এমনটাই খবর। এমনই তথ্য উঠে এসেছে 'এই সময়'র প্রতিবেদনে।
বিশ্বের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এই 'বাঙ্কার বাস্টার' ব্যবহার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েল। ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বাঙ্কার বাস্টার দিয়ে শক্তিশালী আঘাত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, এই 'বাঙ্কার বাস্টার' ব্যবহার করেই হেজবোল্লার প্রধান হাসান নাসারাল্লাকে নিকেশ করেছে ইজরায়েল। তবে অন্য অনেক দেশের হাতেই নাকি রয়েছে এই অস্ত্র।এবার তাদের সঙ্গে জুড়তে চলেছে ভারত তথা কলকাতার নামও। নয়া দিল্লি সূত্রে খবর, কলকাতার একটি সংস্থা আধুনিক পদ্ধতিতে শক্তিশালী 'বাঙ্কার বাস্টার' তৈরির যন্ত্র বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে তা প্রস্তুতও হয়ে যাবে বলে খবর। তবে সেখানে তৈরি 'বাঙ্কার বাস্টার' ভারত ব্যবহার করবে নাকি বিদেশে পাঠানো হবে, তা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
বলে রাখা ভাল, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জোহার ল্যাচম্যান, ইয়োরাম মুসাফি-সহ চার ইজরায়েলি সেনা অফিসার কলকাতায় এসেছিলেন মিসাইল এবং বোমার শক্তিশালী খোলের খোঁজে, যা বাঙ্কার ভেদ করে আঘাত করতে পারে।কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের দাবি, ইজরায়েলের ওই সেনা আধিকারিকরা কলকাতায় এসে যোগাযোগ করেন ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরি (এমএসএফ)-র সঙ্গে। প্রাথমিকভাবে তাঁরা এমএসএফ-কে খোল তৈরির বরাত দিয়েছেন।দিল্লির উচ্চ পর্যায় সূত্রের খবর, ইছাপুরে ১০০ কিলো ওজনের বোমার বাইরেও বেশ কয়েকটি খোল ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই তার সফল পরীক্ষাও হয়েছে। এবার ইজরায়েল থেকে ফের বিশেষজ্ঞরা আসবেন কলকাতায়।কারণ, তাঁরা এসে ওই খোলের ফাইনাল টেস্টিং করবেন। আর সেই খোল যদি তাঁদের পছন্দ হয়, তাহলে তা ফিনিশিং-এর জন্য পাঠানো হবে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে।
কলকাতার দ্বারস্থ কেন ইজরায়েল?
জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আবহে গাজা, লেবানন, ইজরায়েল, ইরান-সহ একাধিক দেশ মিসাইল-ড্রোন হানা থেকে বাঁচতে বাঙ্কার তৈরি করছে। ফলে যাদের কাছে সেই বাঙ্কার ভেদ করে আক্রমণের অস্ত্র থাকবে, তারা যুদ্ধে এগিয়ে থাকবে অনেকটাই।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তাদের বাঙ্কার বাস্টার অনেকটাই ক্ষতি করেছে ইরানি পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার এনরিচমেন্ট প্লান্টের।অন্যদিকে, প্রযুক্তির জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত ইজরায়েল। তবে, বাঙ্কার ভেদ করে আক্রমণ হানার জন্য বোমার শক্তিশালী খোল বানানোর কারিকুরি জানা নেই তাদের। তাই শক্ত খোলের খোঁজ করতে শুরু করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার।আর সেই সন্ধান করতে গিয়েই ব্রাজিল, ইউকে এবং ভারত, এই ৩টি দেশের নাম সামনে আসে। সূত্রের খবর, এরপরেই ইজরায়েল সেনা জানতে পারে, ভারতের কলকাতায় ইছাপুরে থাকা এমএসএফ–ই নাকি এ কাজে সবচেয়ে পারদর্শী।
এরপর কূটনৈতিক মাধ্যমে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে এমএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইজরায়েল প্রথমে স্পেসিফিকেশন দিয়ে জানায়, কতটা শক্তিশালী খোল তারা চাইছে। সেই স্পেসিমেন খোল বানিয়ে রাখা হয়েছিল ইছাপুরে। ১৭ সেপ্টেম্বর এসে তাই পরীক্ষা করে যান ইজরায়েল সেনা অফিসারেরা।বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৮৭২ থেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গোলা-গুলি, কামান, বন্দুকের খোল বানাচ্ছে এমএসএল। আগে তারা ছিল কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির অধীনে। ১৯২০ থেকে এটি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে চলে আসে।