‘বিহার, উত্তরপ্রদেশ এসে করে দেখান, পটক পটক কে মারেঙ্গে।’ হিন্দিভাষীদের উপর হামলায় মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা প্রধান রাজ ঠাকরে এবং শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে নিশানা করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। আর তাঁর এই মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।দেশে ভাষা প্রতিবাদের পরিধি বাড়ছে। আর সেই প্রতিবাদের হাত ধরেই সম্প্রতি পুনর্মিলন হয়েছে ঠাকরে পরিবারে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মুম্বইয়ের একটি খাবারের স্টলের মালিককে বেদম পেটাচ্ছেন কয়েকজন। কারণ তিনি মারাঠি বলতে পারেননি। সেই ঘটনার জেরে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়। শুধু তাই নয়, মারাঠি না বলতে চাওয়ায় ব্যবসায়ী সুশীল কেডিয়ার অফিসেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে এমএনএস কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সম্প্রতি তিন-ভাষা নীতি বাতিল করেছে, যা ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া’ বলে সমালোচনা করেছিলেন রাজ এবং উদ্ধব ঠাকরে। এই আবহে এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ বলেছেন, 'উত্তর ভারতের মানুষকে মারছো? যাও মহিম দরগায়, উর্দুভাষীদের মারার সাহস দেখাও।'
এরপরেই নিশান্ত দুবে পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'মহারাষ্ট্রে কী আছে? বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা এসব রাজ্যের খনিজ সম্পদে চলে তোমাদের রাজ্য। টাটা, রিলায়্যান্সের মতো সংস্থা হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি থেকে টাকা এনে মহারাষ্ট্রে শিল্প গড়েছে। অথচ তারাই আজ মার খাচ্ছে। এটা সস্তা রাজনীতি।' নিশিকান্ত আরও বলেন, 'ভয় দেখিয়ে গায়ের জোর দেখাচ্ছেন। আসুন, উত্তরপ্রদেশে বা বিহারে এসে দেখুন, আপনাদের কীভাবে থামানো হয়।' আর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই অস্বস্তিতে পড়েছে মহারাষ্ট্রের এনডিএ সরকার। বিজেপির শরিক শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) নেতা যোগেশ কাদম নিশিকান্ত দুবের মন্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, 'একজন চারবারের সাংসদের মুখে এমন অহংকারপূর্ণ ভাষা শোভা পায় না। আমরা এসব মেনে নেব না।'
অন্যদিকে মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আপনি যদি নিশিকান্ত দুবের সম্পূর্ণ বক্তব্য শোনেন, তাহলে তিনি একটি সংগঠনের কথা বলেছেন, মারাঠিদের বিরুদ্ধে নয়।তবে আমার মতে, এই ধরনের মন্তব্য করা অনুচিত। মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।' এরপরে ভারতের অর্থনীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'দেশের জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদান মহারাষ্ট্রের। দেশের ইতিহাস এবং বর্তমান সময়ে মহারাষ্ট্র এবং মারাঠি জনগণের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারে না। যদি কেউ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আমার মনে হয় এটি ভুল।' তাঁর কথায়, 'যখন হামলাকারীরা আমাদের সংস্কৃতিতে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল, তখন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ এবং মারাঠারা দেশে যুদ্ধ করেছিল। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সময় আবদালি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু আমাদের মারাঠারা হাল ছাড়েনি।
মহারাষ্ট্রে ভাষা বিতর্ক
১৮ বছরের বিরোধে ইতি টেনে এক হয়েছে ঠাকরে পরিবারের দুই শাখা উদ্ধব ও রাজ। গত শনিবার আওয়াজ মরাঠিচা নামের এক বিজয় সমাবেশে এক হয়ে রাজ বলেছিলেন, ‘গুজরাটি হোক বা অন্য কেউ, মহারাষ্ট্রে থাকলে মারাঠি শেখা উচিত। তবে কেউ মারাঠি না বললে মারধর করার দরকার নেই। কিন্তু যদি নাটক করে, চড় মারতে হবে। তবে ভিডিও তুলবেন না। যাকে চড় মারলেন, সে নিজেই বলবে। ভিডিও করার দরকার নেই।’ সেই নিয়ে তরজা চলছে জোর।এই আবহে রাজ এবং উদ্ধবকে আক্রমণ করেছেন নিশিকান্ত দুবে।