প্রার্থনাস্থল আইনের তোয়াক্কা না করেই যেভাবে ইদানীংকালে ভারতের নানা প্রান্তে সমীক্ষার জিগির তুলে একের পর মসজিদকে নিশানা করা হচ্ছে, তা নিয়ে এবার সংসদে সরব হলেন এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। শনিবার এই বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় নিজের বক্তব্য পেশ করেন তিনি।
সংবিধান প্রণয়নের ৭৫তম বর্ষ পালন উপলক্ষে শনিবার লোকসভায় বক্তৃতা দেন ওয়াইসি। সেই সময়েই হায়দরাবাদের সাংসদ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি 'কেড়ে নেওয়ার' অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। ধরুন কোথাও একটা ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদ রয়েছে... এখন আমি যদি সংসদের নীচে খোঁড়াখুঁড়ি করি, তাহলে তো সেখানেও কিছু না কিছু পাব। তাহলে কি সেটা আমার হয়ে যাবে?’
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের আমলে যেভাবে একের পর এক মসজিদে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে নানা মহলেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ধরনের সমীক্ষা ঘিরে দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ। যার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন দেখতে পাওয়া গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে।
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের তরফে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করা হয়। বলা হয়, দেশের বিভিন্ন মসজিদ-সহ সমস্ত প্রাচীন স্থাপত্যে এই ধরনের সমীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।
সেই আবহে ওয়াইসির প্রায় ৯ মিনিটের এই ভাষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর সেই বক্তৃতায় ওয়াইসি বর্তমানে ভারতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, 'আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাবাসাহেব যেটা বলে গিয়েছিলেন, আজও সেটা সমান প্রাসঙ্গিক। আসলে কেউই চান না যে সংখ্য়ালঘুরা ক্ষমতা ভাগ করে নিক।'
ওয়াইসি এর ব্যাখ্য়া করে বলেন, 'আমাকে একটু সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্য ব্যাখ্যা করতে দিন। (সংবিধানের) ২৫, ২৬, ২৯, ৩০, ১৪ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিই এর ভিত্তি প্রস্তুত করেছে। আমি বলব, এই বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করার মাধ্যমেই সমাজের দুর্বল শাখাগুলিতেও সুবিচার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।'
এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওয়াইসি দেশের নানা প্রান্তে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি ঘটা হেনস্থার ঘটনাগুলিও তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য হল - 'ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি ছিনিয়ে নেওয়া'।
সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে ওয়াইসি বলেন, 'আপনাদের হাতে থাকা ক্ষমতা ব্যবহার করে আপনারা আসলে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি ছিনিয়ে নিতে চাইছেন।'
এই বিলে এমন ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে, যাতে ওয়াকফ বোর্ডের প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক কাজ, যেমন - বিধবা, বিবাহ বিচ্ছিন্না এবং অনাথদের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়। সরকারের তরফে তেমনই প্রস্তাব রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্য়েই কেন্দ্রের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ করেছে, বর্তমান সরকার যে ওয়াকফ বিল প্রস্তুত করেছে, তাতে মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। যদিও সরকারের বক্তব্য হল, ওয়াকফ বোর্ডগুলি যাতে স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতেই এই সংশোধনী প্রস্তাবগুলি দেওয়া হয়েছে।
নিজের বক্তৃতায় ওয়াইসি আরও বলেন, 'সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়ুন। তাতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ধর্মীয় এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠিত করার ও বজায় রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন ওয়াকফের সঙ্গে নাকি সংবিধানের কোনও সম্পর্ক নেই! তাঁকে এসব কে শেখাচ্ছেন? তাঁকে আগে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়তে বলুন।'