আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বিমান মন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ (এএআইবি)। সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই এই কথা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সেই প্রেক্ষিতেই মনে করা হচ্ছে আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতে পারে।
সূত্রের খবর, এই সপ্তাহের শেষের দিকেই রিপোর্টটি সর্বসমক্ষে আনা হতে পারে বলে সরকারি আধিকারিকরা আশাবাদী। রিপোর্টে কী আছে, তার কোনও আভাস মেলেনি। তবে কোন ত্রুটির কারণে গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার আহমেদবাহ থেকে লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার (এআই-১৭১ উড়ান) ওড়ার পরেই ভেঙে পড়েছিল, তা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিক্নির্দেশ ওই রিপোর্টে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উড়ানের ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে একটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ওপর। প্রাণ হারান বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রী, ক্রু-সহ অন্তত ২৭০ জন। সেই দুর্ঘটনা কী করে ঘটল তা খতিয়ে দেখতে এতদিন ধরে তদন্ত চলেছে।
যদিও প্রাথমিক এই রিপোর্টে দুর্ঘটনার আসল কারণ চূড়ান্ত নাও হতে পারে। তবু এই রিপোর্ট থেকে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরবর্তী ধাপ।আহমেদাবাদের দুর্ঘটনায় মৃত ৫২ জন ছিলেন ব্রিটেনের বাসিন্দা। তাঁদের পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মনে করছেন তারা। সূত্রের খবর, তাঁরা যোগাযোগ করেছেন লন্ডনভিত্তিক আইন সংস্থা কিস্টোন ল-এর সঙ্গে। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, তাদের সঙ্গে একাধিক পরিবারের আলোচনাও হয়েছে।
বিমান মন্ত্রকের মতে, গত ১৩ জুন বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার্স (সিভিআর) উদ্ধার করা হয়েছে। যে বাড়িতে বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, তার ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছিল সিভিআর।গত ১৬ জুন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয় ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। বিমানের ব্ল্যাকবক্সের এই দু’টি অংশ থাকে। এগুলি থেকেই মেলে উড়ানের তথ্য। সেই সময় বিমান মন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়, বিমানের সামনের ব্ল্যাক বক্সের ক্র্যাশ প্রোটেকশন মডিউল (সিপিএম) উদ্ধার করা হয়েছে। মেমরি মডিউল উদ্ধার করা হয়েছে ব্ল্যাক বক্স থেকে। এএআইবি গবেষণাগারে ডাউনলোড করার পর সিভিআর এবং এফডিআরের তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তা শেষ হলে হয়তো দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে।
এই তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এএআইবি কর্মকর্তারা এবং ভারতীয় বায়ুসেনা, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড এবং মার্কিন জাতীয় পরিবহণ সুরক্ষা বোর্ডের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা।অতীতে ভারতে বিমান দুর্ঘটনার ব্ল্যাক বক্সগুলি সাধারণত ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলিতে ডিকোডিংয়ের জন্য পাঠানো হত। সেই সময় ভারতে অভ্যন্তরীণভাবে বড় দুর্ঘটনায় ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব ছিল। তবে, দিল্লিতে একটি এএআইবি ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। যা এখন দেশের অভ্যন্তরে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উভয়ই ডিকোড করতে সক্ষম।