প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা এবং দেশ থেকে তাঁর সরকারকে উৎখাত করেও যে বাংলাদেশে চিরশান্তি কায়েম হয়নি, বরং লাগাতার অশান্তি চলছে তো চলছেই, সেকথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তবে, এই সমস্ত অশান্তির জন্য মোটেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও দোষ দেখছেন না মাহফুজ আলম। বরং, তিনি এই সমস্ত অশান্তির যাবতীয় দায় 'একটি দল এবং দেশী বিদেশী সুযোগ সন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট'-এর উপর চাপিয়েছেন।
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি গণ অভ্যুত্থানে, এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকান্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে।’
এখন, বিষয় হল - স্বয়ং মাহফুজ আলমের উত্থান ঘটেছে গত জুলাই-অগস্টের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। তবে, ছাত্র বা যুব নেতা হিসাবে প্রচারে উঠে এলেও বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা। এবং সেই হিসাবে, স্বাভাবিকভাবেই এই অস্থায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে উপদেষ্টা হিসাবে সবরকম সুযোগ-সুবিধাই তিনি পাচ্ছেন।
গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনমাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এই কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে লাগাতার অশান্তি খবর এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বেছে বেছে সংখ্যালঘু - বিশেষ করে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। এবং তাতে প্রকারান্তরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।
এরই মধ্যে, নানা ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলন, বিক্ষোভ, মিছিল হয়েছে। সর্বোপরি গত কয়েক দিনে উন্মত্ত ছাত্ররা প্রতিবাদের নামে হাসপাতাল, কলেজের মতো স্থানে নির্বিচারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে বলেও নানা মহলের অভিযোগ।
এসব নিয়েই সোমবার তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ লম্বা একটি পোস্ট করেছেন মাহফুজ আলম। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত - নানা ইস্যু তুলে ধরেছেন।
মাহফুজের দাবি, 'মুক্তিযুদ্ধের পরের দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে হত্যার ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিল, তা ইতিহাস একদিন বলবে।'
এর পাশাপাশি, বর্তমান সমকার অস্থিরতার জন্যও সরকারপক্ষের বদলে 'গোলামির মানসিকতার কিছু গাদ্দার আর হঠকারীর' উপরেই দায় চাপিয়েছেন মাহফুজ।