'বুলি'র খোলোস ছেড়ে ফের ফিরেছে কথা। তাই দর্শকদের পাশাপাশি সেট জুড়েও নতুন উদ্যোম। আর সেই নতুন যাত্রায় সামিল হতে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাও পৌঁছে গিয়েছিল 'কথা'র সেটে। তাছাড়াও মেগায় শুরু হয়েছে 'ঋতু' আর 'অফিসার সরকার'-এর নতুন ট্র্যাক। তাই শ্যুটিয়ের ব্যস্ততা প্রবল, তবে তার মাঝেই পর্দার 'কথাগ্নি' জুটি অর্থাৎ সুস্মিতা দে ও সাহেব ভট্টাচার্য ধরা দিলেন অকপট আড্ডায়।
হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে সাহেব বলেছিলেন যে 'কথা' তুলনায় 'বুলি'র চরিত্রটি তিনি বেশি উপভোগ করেন। তবে এবার 'বুলি' মোড়ক ছেড়ে 'কথা' ফিরে এসেছে। তাহলে কি 'বুলি'র সেই চার্মটা মিস করছেন সাহেব? এই প্রশ্নে নায়ক বলেন, 'এখন তো বোঝা যাচ্ছে যে 'কথা' সেই 'বুলি'। যা 'বুলি' করতে পারে তা 'কথা'ও করতে পারে। 'কথা' ছবিও আঁকতে পারে, গানও গাইতে পারে, পুজো করতে পারে, গোয়েন্দাগিরিও করতে পারে, আন্ডারগ্রাউন্ড এজেন্টও হয়ে যেতে পারে।'
এরপরও কি তাহলে মেগায় 'বুলি'র মতো করে 'কথা'কে দুষ্টুমি করতে দেখা যাবে? প্রশ্নে সুস্মিতা বলেন, 'এখনই হয়তো নয়, পরিস্থিতি সে রকম তৈরি হলে হয়তো দেখা যাবে। কিন্তু সেটা কথার স্টাইলেই হবে।' তবে সুস্মিতার মুখের কথা শেষ না করতে দিয়েই পাশ থেকে সাহেব বলে ওঠেন, 'ক্যামেরা অফ থাকলে, কেবল কথা বলার ধরণটা ছাড়া বাকি পুরোটাই তো সুস্মিতা 'বুলি'র মতো। ওঁর কাজকর্ম সব বুলির মতো। সেটা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।'
তবে একটা সময় শোনা যেত সুস্মিতা নাকি খুব শান্ত। এই কথায় নায়িকাও পূর্ণ সম্মতি জানিয়ে বলেন, 'একটু না আমি পুরোপুরি শান্ত, দর্শকরাও তাই জানেন।' তবে তা শুনে সাহেব বলেন, 'সে তো দর্শকদের যতটুকু দেখানো হয়, যতটা তাঁরা ক্যামেরার সামনে দেখতে পান, ততটুকু জানেন। কিন্তু ক্যামেরা বন্ধ হয় গেলে কী কী হয় তা এখানে যাঁরা আছেন সেটে তাঁরা জানেন।'(তারপর একসঙ্গে হেসে ওঠেন তাঁরা)
তবে বাস্তবে তাঁদের মধ্যে এত সখ্যতা থাকলেও পর্দায় কিন্তু এখন মান-অভিমানের পালা চলছে। তবে দর্শকরা পর্দায় 'কথাগ্নি'কে রোম্যান্টিক মেজাজে দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। আবার পর্দায় কবে 'কথা-অগ্নি' প্রেম দেখতে পাবেন দর্শকরা? প্রশ্নে সুস্মিতা বলেন, 'মান-অভিমানটা পাহাড়ের মতো হয়ে গিয়েছে। কারণ যা যা ঘটনা ঘটেছে। 'এভি' ভেবেছিল যে কথা মারা গিয়েছে। আর সেটা হয়েছে 'এভি'র জন্যই। কিন্তু যখন জানতে পারে যে, 'কথা' 'বুলি' সেজে এতদিন ধরে অভিনয় করছিল। এতবার জিজ্ঞাসা করার পরও ও মুখ খোলেনি, এভি এত কষ্ট পাচ্ছে দেখেও। তো সেটার জন্য অভিমান হওয়া তো স্বাভাবিক। আর সেটা ভাঙতেও বেশ কিছুটা সময় লাগবে।'
কিন্তু বাস্তবে কি সাহেব-সুস্মিতার মধ্যে কখনও মান অভিমান এসেছে? প্রশ্নে সাহেব বলেন, 'না, আমরা মান-অভিমান করি না। মান-অভিমান হয় না এত আমাদের মধ্যে। আমরা এসে কাজ করি, মজা, করি, আনন্দ করি।' অন্যদিকে সুস্মিতা বলেন, 'রাগ খুব একটা হয় না। সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় না।' তাঁর কথার রেশ টেনেই সাহেব বলেন, 'ওঁর (সুস্মিতার) খুব একটা রাগ হয় না। ও অস্থির হয়ে পড়ে। আমার রাগ হয়। তবে আমার রাগ যত তাড়াতাড়ি হয়, তত তাড়াতাড়ি কমেও যায়। কিন্তু ওঁর তো রাগ হয় না, ও অস্থির হয়ে ওঠে। আর সেই সময় সকলকে অস্থির করে তোলে। আমরা কোনও রাগ, অভিমান, ঝগড়া, ইনস্টাগ্রামে আনফলো করে দেওয়া এই সবে বিশ্বাসী নই, আর করবও না।'
তারপর ফের পর্দার অগ্নির প্রসঙ্গ টেনে সাহেব বলেন, 'এভি আসলে কখনও বিয়ে করতে চাইত না। ওঁর প্রথমবার বিয়ে হয়েছে একজনের সঙ্গে, ও আসলে না দুনিয়াটা দেখেনি। ওর তো জানার কথা নয় যে পৃথিবীর সব থেকে বড় গোয়েন্দা কে?' তাঁর কথার মাঝেই সুস্মিতা বলে ওঠেন, 'পৃথিবীর সব থেকে বড় গোয়েন্দা কথাকলি গুহ'। তবে নায়িকার কথায় আপত্তি জানিয়ে সাহেব বলেন, 'না পৃথিবীর সব থেকে বড় গোয়েন্দা বউরা। কোনও মিথ্যে কথা বললে তাঁরা ঠিক আসল সত্যিটা খুঁজে বের করে।' তবে কথার মতো সুস্মিতা বা সাহেবও কি গোয়েন্দাগিরি করেছেন কখনও? প্রশ্নে সুস্মিতা বলেন, 'না না। আমি করিনি।' অন্যদিকে, সাহেব বলেন, 'আমার প্রয়োজন পরেনি।' তারপর মজা করেই বলেন, 'আমি ২০১০ থেকে তোপসে করছি তো, তাই আর করার সময় পাইনি'।
তবে এই হাসি ঠাট্টা মজা করে শ্যুটিং করার মাঝেও রয়েছে টিআরপি চোখ রাঙানি। তা তো অভিনেতাদের উপরও প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে তো মেগা বন্ধও হয়ে যায়। তাছাড়া বর্তমানে দেখাও গিয়েছে কয়েক মাসের মধ্যে বহু ধারাবাহিক শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। 'কথা'র টিআরপিও খানিক পড়েছে। এটা তাঁদের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে? এই প্রসঙ্গে সাহেব বলনে, 'খুব সততার সঙ্গে বলতে গেলে একজন অভিনেতা হিসেবে আমি মনে করি না যে, টিআরপি নিয়ে আমার মাথাব্যাথার কোনও প্রয়োজন রয়েছে। আমার কাজ হচ্ছে যে চরিত্রটা আমার কাছে এসেছে সেটা কতটা সততার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পারি। কতটা মজা করে ভালো ভাবে কাজটা করতে পারি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব ভালো ভালো গল্প এসেছে তার মাঝে আইপিএল এর ম্যাচ চলে এল। সেই গল্পটা তখন আর দর্শকরা দেখলেন না। টিআরপি পড়ে গেল। তার মানে অভিনেতারা কী কাজটা ভুল করছেন? তা কিন্তু না। সুতরাং এই টিআরপির ভাবনাটা আমাদের নয়। তাই আমার আর সুস্মিতার মনে হয় যে কাজটা ভালো ভাবে করি, তারপর টিআরপি-এর দিকটা নির্মাতারা নিজেদের মতো করে সামলে নিতে পারবেন।'
তবে টিআরপি চোখ রাঙালেও এখনও দর্শকদের পছন্দের মেগার প্রথম সারিতেই আসে 'কথা'। বহু নতুন নতুন চালু হওয়া মেগা বন্ধ হয়ে গেলেও এখনও 'কথা' একই ভাবে চলছে। এই প্রসঙ্গে সাহেব জানান, 'আসলে অনেকগুলো ভালো অভিনেতা যখন একসঙ্গে একটা কাজ করেন। একজন ভালো লেখক যখন একটা ভালো গল্প লেখেন, যে গল্পটার মধ্যে ড্রামা-কমেডি-আবেগ সবটা থাকে, আর সর্বোপরি যখন অভিনেতারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যান, তাঁরা যখন একটা পরিবার হয়ে ওঠেন। তাঁদের সততার সঙ্গে কাজ করার তাগিদ তৈরি হয় সেটাই একটা কাজকে আরও সুন্দর করে তোলে। আমার মনে হয় এটাই আমাদের শোয়ের ইউএসপি। আমাদের সকলের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক, সেটা ভাঙার চেষ্টাও হয়, কিন্তু তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে যায় না। আমরা একসঙ্গে মিলে মিশে কাজটা করি। সেই জন্য কোথাও গিয়ে এই বিষয়টাই পর্দায় গিয়ে প্রতিফলিত হয়।'
তবে কেবল পুরো টিম নয় দর্শকরা সুস্মিতা-সাহেবের জুটিটাও বেশ পছন্দ করেন। এই প্রসঙ্গে সাহেব বলেন, 'যতদিন দর্শকদের আমাদের জুটি ভালো লাগছে, ততদিনই আমাদের কাজের সার্থকতা। কোনও ফর্মুলা মেনে তো আমাদের এই রসায়ন তৈরি হয়নি। কিন্তু সততার সঙ্গে আমরা এই চরিত্র দুটোর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি বলেই মনে হয় এই রসায়নটা তৈরি হয়েছে।' তাঁর কথার রেশ ধরেই সুস্মিতা বলেন, 'দর্শক প্রথমে কথা আর অগ্নিকেই ভালোবেসেছেন, তারপর সাহেব-সুস্মিতা জুটিকে ভালোবেসেছেন।'