তাঁর মুখে সবসময় শোনা যেত শ্যামা সংগীত, মা কালীর আরাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন তিনি। জন্ম থেকে কখনও বাবাকে দেখেননি, বাবার মৃত্যুর জন্য মায়ের অবহেলা পেয়েছেন জন্ম থেকেই। বড় হয়েছেন পিতা তুল্য দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছে, মেজ বৌদিকে পেয়েছিলেন মায়ের মতো। সংসারও করেছিলেন তিনি। এক সন্তানের বাবাও ছিলেন তিনি। কিন্তু এত কিছু পরেও কেন হঠাৎ করে ৩৬ বছর বয়সে আত্মহত্যা করলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য?
পান্নালাল ছিলেন একজন আদ্যপ্রান্ত সংসারী মানুষ। ১৯৩০ সালে হাওড়ার বালিতে জন্ম হয়েছিল তাঁর। ১১ ভাই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন তিনি। জন্মের আগেই বাবার মৃত্যু হওয়ায় মেজ দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছেই মানুষ হন তিনি। মেজদার হাত ধরেই শ্যামা সঙ্গীতের জগতে পদার্পণ করেছিলেন পান্নালাল। এক সময় দাদা ধনঞ্জয়কে সুনামের দিক থেকে ছাপিয়ে যান তিনি। সবকিছুই ছিল, তাহলে কিসের আক্ষেপ ছিল তাঁর মনে?
(আরও পড়ুন: কেন ধনতেরাসে পালিত হয় আয়ুর্বেদ দিবস! জানুন কারণ এবং গুরুত্ব)
জানা যায়, পান্নালালের দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য নাকি বহুবার মা ভবতারিণীকে দেখেছিলেন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও পান্নালাল কখনও দেখতে পাননি, এটাই তাঁর জীবনের অন্যতম বড় আক্ষেপ ছিল। সংসারী হলেও তিনি বারবার ছুটে যেতেন শ্মশানে। কী খুঁজতেন তা কেউ জানে না। শুধু সবাই দেখত, পান্নালাল ‘মা’ ‘মা’ বলে কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে।
জীবদ্দশায় ‘আমার সাধ না মিটিলো’ থেকে শুরু করে ‘ডুব ডুব ডুব ডুব সাগরে আমার মন’ - এমন বহু গান সৃষ্টি করে মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সাধ না মিটিলো, গানটি ছাড়া আজও কালীপুজো অসম্পূর্ণ। এই গানের মধ্যে দিয়েই যেন পান্নালালের মনের সেই আক্ষেপ বারবার উঠে আসে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ কি শুধুই ছিল এই আক্ষেপ নাকি অন্য কিছু?
(আরও পড়ুন: ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে বাড়িতে বানান ১৪ শাক, রইল সহজ রেসিপি)
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে দুটি গান রেকর্ড করার জন্য দাদা ধনঞ্জয়ের সঙ্গে পান্নালাল গিয়েছিলেন একটি রেকর্ড স্টুডিওয়ে। সেদিন একটি ছোট্ট জায়গা বারবার ভুল করছিলেন পান্নালাল। পান্নালালের এই ভুল দেখে রীতিমতো ধমক দেন দাদা ধনঞ্জয়। দাদার মুখের ওপর কোনও কথা না বললেও চুপ করে যান তিনি। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই ১৯৬৬ সালের ২৬ মার্চ কাকুলিয়া রোডের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন পান্নালাল।