রথযাত্রায় জগন্নাথদেব তার ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে পাড়ি দেন মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেখানে সাত দিন থাকার পর ফিরে আসেন নিজধামে। কথিত আছে, এই সাতদিন মাসির বাড়ি থাকেন প্রভু জগন্নাথ। গুণ্ডিচাবাড়িতেই আস্তানা গেড়ে বসেন। কিন্তু কে এই গুণ্ডিচা দেবী? তিনি কি সত্যিই মাসি ছিলেন জগন্নাথের?
জগন্নাথদেবের উদ্ভবেই ছিলেন তিনি
এর উত্তর জানতে হলে পৌঁছে যেতে হবে জগন্নাথদেবের উদ্ভব কাহিনিতে। সমুদ্র থেকে দারুব্রহ্ম উদ্ধারের পর অনেক বাধা পেরিয়ে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ। কিন্তু প্রথমে পাওয়া যাচ্ছিল শিল্পীকে। বহু পরে একজন শিল্পী নিজেই এসে দায়িত্ব নেন মূর্তি গড়ার। কিন্তু তাঁর শর্ত ছিল। মূর্তি গড়ার সময় মন্দিরের প্রধান দ্বার বন্ধ থাকবে। তিনি যতদিন মূর্তি গড়ছেন, ততদিন সেই দ্বার খোলা যাবে না। মূর্তি নির্মাণ শেষ হলে তিনি নিজেই বেরিয়ে আসবেন। আর তার আগে কেউ দরজা খুললে মূর্তি গড়ার কাজ ওখানেই থেমে যাবে।
যা করেছিলেন গুণ্ডিচা
এই প্রস্তাবে ওড়িশার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজি ফলে শুরু হয় মূর্তি গড়া। রাজা শর্ত মেনে নিলেও ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী গুণ্ডিচা কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর তিনি মন্দিরের কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন ভিতরে আদৌ মূর্তি নির্মাণ হচ্ছে কি না। অবশেষে কয়েক মাস পেরিয়ে যেতে তিনি রাজাকে অনুরোধ করেন, এবার মন্দিরের দরজা খোলা হোক। এতদিন ধরে কী মূর্তি নির্মাণ হচ্ছে! রাজি ইতস্তত করলে রাণী নিজেই প্রধান দ্বার খোলানোর ব্যবস্থা করেন। দ্বার খোলার পর দেখা যায়, সেখানে দারুমূর্তি অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হাত দুটো তখনও গড়া হয়নি।
গুণ্ডিচার প্রার্থনা
এই দেখে গুণ্ডিচা কান্নায় ভেঙে পড়লে সেখানে নারদ উপস্থিত হন। তিনি বলেন, এ সবই প্রভুর লীলা। প্রভু এমনটাই চেয়েছিলেন। তখন গুণ্ডিচা ইচ্ছে প্রকাশ করেন, প্রভু যেন তার সন্তান হিসেবে একবার জন্ম নেন ও তাঁর ঘরে এসে থাকেন। জগন্নাথদেব গুণ্ডিচার সে প্রার্থনা রাখেন। গুণ্ডিচার গর্ভে জন্ম না নিলেও তিনি প্রতি বছর মাতৃপ্রতিম মাসির বাড়ি সাতদিনের জন্য ভ্রমণ করতে যান। সেখানে অবস্থান করেন। মনে করা হয়, গুণ্ডিচাবাড়িতে এই কারণেই প্রতি বছর জগন্নাথদেব নিয়ম করে ভাইবোনদের নিয়ে সাতদিনের জন্য থাকেন।