গত কয়েক দিন ধরে আলোচনায় ফিরে এসেছে গিলেন বা সিনড্রোম (উচ্চারণ ভেদে গুলেন বেরি সিনড্রোম) বা GBS। সোমবার কলকাতার ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ (ICH)-এ এই অসুখ নিয়ে দুই শিশু ভর্তি হয়েছে বলেও শোনা গিয়েছে। এটি কতটা মারাত্মক? এর চিকিৎসাই বা কী? এই নিয়ে HT বাংলার তরফে জিজ্ঞাসা করা হয় ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এর চিকিৎসক এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরীকে। কী বলছেন তিনি?
প্রশ্ন: শোনা গিয়েছে, আমাদের রাজ্যেও এই অসুখটি ছড়িয়ে পড়েছে? এটি কতটা উদ্বেগের?
ড. চৌধুরী: জিবিএস নিয়ে বর্তমানে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটি বিরল অসুখ হলেও একে অতি বিরল বলা যাবে না। প্রতি বছরই অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হন এবং বেশির ভাগেরই অসুখটি সেরে যায়।
প্রশ্ন: সাধারণত কারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন?
ড. চৌধুরী: দেখা গিয়েছে, শিশুদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে তাদের বেশির ভাগই নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে সেরেও যায়।
প্রশ্ন: এই রোগটিতে কেউ কীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন?
ড. চৌধুরী: খুব স্পষ্ট ভাবে এখনও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর উত্তর নেই। তবে এটি মূলত পেশির অসুখ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্নায়ুকে আক্রমণ করে। সেখান থেকেই অসুখটি হয়। এর পিছনে যে কোনও ধরনেরই সংক্রমণের ভূমিকা থাকতে পারে। সেখান থেকে সমস্যাটির সূত্রপাত।
প্রশ্ন: এর প্রাথমিক লক্ষণ কী এবং কীভাবে রোগটি ছড়ায়?
ড. চৌধুরী: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর উপসর্গ গোড়ায় টের পাওয়া যায় না। এমনকী জ্বরও হয় না। সাধারণত দেখা গিয়েছে পায়ের নীচের দিক থেকে সমস্যার শুরু হয়। তার পরে ক্রমশ সেটি উপরের দিকে আসতে থাকে। পায়ের উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ার সময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগটি থেমে যায়। রোগীর সেরে উঠতে থাকে। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেটি শরীরের উপরের দিকে চলে আসে। এরকম অবস্থায় বিপদ বাড়তে পারে।
প্রশ্ন: এই বিপদ কি প্রাণহানিরও কারণ হতে পারে?
ড. চৌধুরী: কোনও রোগীর ক্ষেত্রে যদি জিবিএস উপরের দিকে উঠতে উঠতে বুক এবং পেটের সংযোগস্থলে ডায়াফ্রাম পর্যন্ত চলে আসে, তাহলে সমস্যা বড় আকার নেয়। কারণ তখন এই অসুখ ডায়াফ্রামের পেশির উপর প্রভাব ফেলে। ফলে রোগীর পক্ষে শ্বাস নেওয়াটা সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। তখন ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: হালে মহারাষ্ট্রে এই রোগ ছড়িয়েছে। সেখানে ভাত, পনিরের মতো কিছু খাবার খেতে বারণ করা হচ্ছে। এমন কোনও খাবার আছে কি যার সঙ্গে এই রোগের যোগ রয়েছে?
ড. চৌধুরী: মহারাষ্ট্রে এই অসুখে আক্রান্ত যে কয়েক জনের খবর এসেছে, তাদের শরীরে একটি বিশেষ ভাইরাসের লিংক পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওই রকম করে বলা যায় না যে, কোনও খাবার থেকে এই রোগটি হতে পারে। কারণ আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান নিশ্চিত করে টের পায়নি, কোন ভাইরাস থেকে এই অসুখটি হয়। তাই কোনও খাবার বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্যকর এবং পরিচ্ছন্ন খাবার নিয়ে যেটুকু সচেতনতা থাকা দরকার, সেটুকু থাকলেই হবে।
প্রশ্ন: জিবিএসের কোনও ওষুধ আছে কি?
ড. চৌধুরী: ওষুধ আছে। সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রোগটি সারাতে পারে। তবে সেটি দামি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগীরা এই রোগ থেকে সেরে ওঠেন। ফলে দুশ্চিন্তার বিশেষ কোনও কারণ নেই।
প্রশ্ন: ভয় পাওয়ার মতো কারণ তাহলে আছে কি?
ড. চৌধুরী: একেবারেই নয়। বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, খাবার ইত্যাদি নিয়ে অযথা গুজব ছড়িয়ে বা ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, যে কোনও সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ একটা কথাই জোর দিয়ে বলব— এই রোগটি বিরল বটে, কিন্তু একেবারেই যে হয় না, তাও নয়। এবং যাঁদের হয়, তাঁরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে যান।