হালে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন, যদি তাঁর কর্মীরা নিজেদের BMI কমাতে পারেন, তাহলে মাসের বেতনের অর্ধেক বোনাস হিসাবে হিসাবে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। আপাতভাবে মনে হতে পারে, BMI বা Body Mass Index কমানোর উৎসাহ দেওয়ার পদ্ধতি খুব সাধু। এতে কর্মীরা ওজন কামানোর উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু বিষয়টি কি আদপেও তাই? তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

চিত্রা নামের একজন টুইটারে লিখেছেন, এই ঘোষণা বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও কর্মীদের নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন করা এবং সুস্থ থাকতে উৎসাহ দেওয়ার কারণেই এই ঘোষণা, কিন্তু এর পিছনে রয়েছে বড় বিপদের ইঙ্গিত, তেমনই দাবি করেছেন চিত্রা।
হালে চিকিৎসকরাও বলছেন BMI বা Body Mass Index-এর হিসাব মোটেই ঠিক নয়।
কীভাবে মাপা হয় BMI বা Body Mass Index?
কিলোগ্রাম এককে কোনও ব্যক্তির ওজন যত, তাকে মিটার এককে তাঁর উচ্চতা যত, সেই সংখ্যার বর্গফল দিয়ে ভাগ করতে হয়। তাতেই পাওয়া যায় BMI বা Body Mass Index।
অর্থাৎ কারও ওজন যদি ৭০ কিলোগ্রাম আর উচ্চতা ১.৮ মিটার হয়, তাহলে তাঁর BMI বা Body Mass Index হবে ৭০ ÷ (১.৮ x ১.৮) = ২১.৬।
আগে মনে করা হত, BMI বা Body Mass Index ১৮.৫ থেকে ২৪.৯-এ মধ্যে থাকা মানে তা স্বাভাবিক। আর ৩০-এর উপরে হওয়া মানে, তা ওবেসিটির লক্ষণ।
কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসকরা এই BMI বা Body Mass Index-কে আর সুস্থতার সূচক বলে মানতে চান না।
কেন BMI বা Body Mass Index-কে আর সুস্থতার সূচক বলে ধরা হয় না?
মূলত তিনটি কারণে এটিকে আর কোনও সূচক বলে ধরা হয় না।
- এতে ওজনের কতটা মেদের জন্য আর কতটা পেশির জন্য, তা আলাদা করে বোঝার কোনও উপায় নেই।
- আলাদা আলাদা পরিবেশের মানুষের জন্য এই সূচক এক হওয়া উচিত নয়। একজন আফ্রিকার মানুষ, একজন ইউরোপের মানুষ এবং একজন এশিয়ার মানুষের BMI বা Body Mass Index এক হলেও তাঁদের সুস্থতার মাত্রা এক নাও হতে পারে।
- BMI বা Body Mass Index শরীরের কোথায় মেদ আছে, তাও আলাদা করে মাপতে দেয় না। দেখা গিয়েছে কারও শরীরের ঊর্ধ্বভাগে বেশি মেদ রয়েছে। তার হৃদরোগের আশঙ্কা সেই সব মানুষের চেয়ে বেশি, যাঁদের উরু বা কোমরের আশপাশে মেদের পরিমাণ বেশি। অথচ দু’জনের BMI বা Body Mass Index-এর মাপ হয়তো এক।
এই সব কারণেই এখন আর BMI বা Body Mass Index-কে সুস্থতার সূচক হিসাবে মানতে চান না চিকিৎসকরা। আর এই যুক্তিতেই BMI বা Body Mass Index-এর নিরিখে বোনাস দেওয়ার পদ্ধতিটির সমালোচনা হয়েছে বহু মহলে।
এর পাশাপাশি উঠে এসেছে আরও একটি বক্তব্য। অনেকেরই বক্তব্য, অনেকের চেহারার ধরনই এমন, তাঁরা চট করে রোগা হতে পারেন না। বা জিনগত কারণেই তাঁদের তেহারা বড়সড়। তাই তাঁদের BMI বা Body Mass Index বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অন্যরা বোনাস পেলে, তাঁরা যদি না পান, সেটি তাঁদের হীনমন্যতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।