সালটা ১৯৭৯, মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ ছবির হাত ধরে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল শ্রীলা মজুমদারের। তখন শ্রীলার বয়স মাত্র ১৬। পরবর্তী সময়ে মৃণাল সেনের মোট ৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর কাজল কালো চোখের ভাষায় জীবন্ত হয়ে উঠত চরিত্ররা। তিনি কাজ করেছেন শ্যাম বেনেগালের 'আরোহন', 'মান্ডি'র মতো ছবিতে। নিজের কেরিয়ারে শাবানা আজমি, নাসিরুদ্দিন শাহ, স্মিতা পাতিলের মতো অভিনেতাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন অভিনেত্রী, জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। তবে জীবনের শেষ লড়াইটা জিততে পারলেন না শ্রীলা মজুমদার।
ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গত ২৭ জানুয়ারি মৃত্যু হয় শ্রীলা মজুমদারের। শুক্রবার নন্দনে প্রয়াত অভিনেত্রীকে স্মরণ করেন টলিপাড়ার বিশিষ্টরা এবং তাঁর কাছের মানুষরা। উদ্যোক্তা 'সিনেমাথেক'। সেই সভায় উপস্থিত বিশিষ্টদের গলায় উঠে এল আক্ষেপের সুর। প্রশ্ন, ৬৫ বছর বয়সী শ্রীলাকে কি প্রকৃত সম্মান দিতে পেরেছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি?
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছিল শ্রীলা মজুমদারের। শ্রীলাকে 'দিদি' বলতেন ঋতুপর্ণা। সেদিন তাঁর 'দিদি'র মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। তাঁর গলাতেও এদিন ধরা পড়ল আক্ষেপের সুর। তাঁর কথায় ইন্ডাস্ট্রি থেকে আরও অনেককিছু পাওয়ার ছিল শ্রীলা মজুমদারের। মুম্বই থেকে ফোনে নন্দিতা দাসের গলাতেও ছিল সেই একই সুর, ‘শ্রীলা মজুমদার তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি।’ স্মরণ সভায় নন্দিতা দাসের বার্তা তুলে ধরেন ঋতুপর্ণা। চৈতি ঘোষালও তাঁর পরিচালিত 'নেভারমাইন্ড' ছবির একটা চরিত্রের জন্য শ্রীলা মজুমদারের কথা ভেবেছিলেন। চৈতির আক্ষেপ তাঁর সেই ভাবনা পূরণ হল না।

শ্রীলা মজুমদারের স্মরণসভা
শ্রীলা মজুমদারকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানাতে চান বলে জানালেন রেশমি মিত্র। অভিনয়ের প্রতি শ্রীলা ভালোবাসার কথা তুলে ধরে রেশমি মিত্র বলেন, ‘সব সময় বলতেন, যেন আমার ছবিতে ওঁর জন্য একটা চরিত্র রেখে দিই। বারান্দা ছবিতে মাত্র দুটো দৃশ্য এককথায় অভিনয়ে রাজি হয়ে যান শ্রীলাদি। শিশিরকুমার ভাদুড়ির বায়োপিক বড়বাবু-তে একপ্রকার জোর করেই অভিনয় করতে চেয়েছিলেন শ্রীলাদি। তবে সেসময় ওঁর স্বাস্থ্যের কথা ভাবে আমি ঝুঁকি নিতে চাইনি। তবে আমার অনুরোধে উনি নিয়মিত ওয়ার্কশপ করিয়েছেন, এমনকি ফ্লোরেও শ্যুটিং দেখতে এসেছিলেন শ্রীলাদি।’
এদিন রেডিও নাটকে তাঁর বিশেষ দক্ষতার কথা তুলে ধরেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। এদিন শ্রীলা মজুমদারের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘যে কোনও বয়সের মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন, তাঁদের মন বুঝতে পারতেন শ্রীলাদি।’ এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন শ্রীলা মজুমদারের স্বামী এস এন এম আব্দি ও পুত্র সোহেল আব্দি।