বলিউডের অন্যতম চর্চিত দম্পতি নাসিরুদ্দিন শাহ এবং রত্না পাঠক শাহ। ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য শোবিজ দুনিয়ায় নামডাক রয়েছে দুজনেরই। দুই ছেলেকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য তাঁদের।নাসির-রত্নার বিয়ের বয়স ৪২ বছর পেরিয়েছে। ১৯৮২ সালে নিকাহ সেরেছিলেন তাঁরা। তবে ভিনধর্মী, ডিভোর্সি পুরুষের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল রত্নার পরিবার।
আখের রস খেতে গিয়ে প্রথম দেখা দুজনের, সেখান থেকে রঙ্গমঞ্চে একসাথে কাজ। ভাগ্য যে তাঁদের এভাবে জুড়ে দেবে নিজেরাও প্রথমে বুঝতে পারেননি। তবে সহজ ছিল না তাঁদের প্রেমটা বিয়ের আসর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
নাসিরুদ্দিন শাহর সঙ্গে রত্নার বিয়েতে শুরুতে আপত্তি জানায় পরিবার। পাত্র মুসলিম শুধু নয়, এক সন্তানের পিতা এবং ডিভোর্সি। রত্নার আগে আরও একবার বিয়ে করেছিলেন ‘সরফরোশ’ অভিনেতা। অনেকেই হয়ত জানেন না, ১৫ বছরের বড় ডিভোর্সি মহিলার প্রেমে পড়ে পরিবারের অমতে যৌবনে বিয়ে সারেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম মানারা সিকরি। দুজনের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে হিবা শাহ। হ্যাঁ, অভিনেত্রী হিবা শাহ, নাসিরুদ্দিনের প্রথমপক্ষের সন্তান।
ললনটপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রত্না জানান, তাঁর বাবা-মা এই বিয়ের স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। পাশাপাশি আর্থিক দিক থেকেও সেই সময় স্বচ্ছল ছিলেন না নাসির। অভিনেত্রী বলেন, ‘সমস্যা তো অবশ্যই ছিল। প্রথমত, উনি অভিনেতা। তারপর দেখতেও হিরোসুলভ নয়! সেইসময় ওকে অনেক শুনতে হয়েছে যে এইরকম চেহারা নিয়ে অভিনেতা হওয়া যায় না। ওর পরিবারও বলেছে। দুর্দান্ত অভিনেতা হলেও অভিনেতার টিকে থাকা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। জীবনটা কঠিন, কেউ গ্র্যারেন্টি দিতে পারে না’।
অভিনেত্রী যোগ করেন, ‘আমার বাবা-মা চিন্তিত ছিল, কীভবে আমরা বাঁচব। বাবা তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যান, তবে মায়ের সঙ্গে নাসিরের সুন্দর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। নাসিরের পরিবার আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল, সেটা দারুণ ব্যাপার’।
কাকতালীয়ভাবে, ১৯৮২ সালে রত্নাকে বিয়ে করেন নাসির। ওই বছরই মারা যায় তাঁর প্রথম স্ত্রী, তার আগে অবশ্য মানারা ওরফে পারভিন মুরাদের সঙ্গে তালাক হয়ে গিয়েছিল নাসিরের। শাশুড়ির সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রত্নার। তাঁর আক্ষেপ, ‘দারুণ মানুষ ছিলেন। কিছু একটা হতে পারতেন, যদি উনি পড়াশোনার সুযোগ পেতেন, কিন্তু ওই সময়টাই এমন ছিল…’।
রত্নার কাছে তাঁর অভিনয়ের গুরু স্বামী নাসিরুদ্দিন। ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, পেশাদার জীবনেও অনেককিছু তাঁর থেকে শিখেছেন। জাতীয় স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাশ করার পর মুম্বই পৌঁছেছিলেন তিন বন্ধু নাসিরুদ্দিন শাহ, রাজেন্দ্র যশপাল এবং ওম পুরী। সেখানেই এক নাটকের রিহার্সালের ফাঁকে দেখা হয়েছিল রত্না ও নাসিরের। আখের রস খাচ্ছিলেন দুজনেই।

তিন সন্তানকে নিয়ে এখন সুখী সংসার নাসির-রত্নার। নাসিরের প্রথমপক্ষের মেয়ে হিবার সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে রত্নার। দম্পতির দুই ছেলে বিভান ও ইমাদ। বাবা-মা'র পদচিহ্ন অনুসরণ করে শোবিজ জগতে পা রেখেছেন তাঁরা।