শহরে এই প্রথম কার্টুনের মেলা।নাম, কার্টুন মেলা। এক ছাদের নিচে রকমারি সব কার্টুন। কার্টুন দল নামের এক সংগঠনের উদ্যোগে দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারীর সর্দার শঙ্কর রোডে রিড বেঙ্গলি বুক স্টোরে এই মেলা বসেছে। শুরু হয়েছে চলতি মাসে, চলবে আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিরাট এই বই বিপণিই হয়ে উঠেছে এই মেলা প্রাঙ্গন। কলকাতার কার্টুন প্রেমীদের কাছে কার্টুনদের সঙ্গে সময় কাটানোর এ এক সুবর্ণ সুযোগ। বিশিষ্ট কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট রেবতীভূষণ ঘোষের শতবর্ষ। প্রয়াত শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এই আয়োজন, জানালেন 'কার্টুন দল' এর অন্যতম সদস্য তথা বিখ্যাত ইলাস্ট্রেটর এবং কার্টুনিস্ট উদয় দেব। এই মেলা শুরু হয়েছে ৫ ডিসেম্বর, চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।

প্রসঙ্গত, এই 'কার্টুন দল' এর পথ চলা শুরু বছর পাঁচেক আগে।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন ও বাংলা কার্টুনের গবেষক প্রফেসর শুভেন্দু দাসগুপ্ত গড়ে তোলেন কার্টুনদল।চন্ডী লাহিড়ী, অমল চক্রবর্তী, অনুপ রায়, দেবাশীষ দেব, ঋতুপর্ণ বসু, উপল সেনগুপ্ত এবং উদয় দেব। তাঁদের প্রায় অনেকেই এখনও রয়েছেন। সঙ্গে এসেছেন আরও নতুন সব কার্টুনপ্রেমী সদস্য। স্রেফ কার্টুনকে কেন্দ্র করে এক মেলা এ রাজ্যে তো বটেই, সম্ভবত এ দেশেও এই প্রথম। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এই কার্টুন মেলা? জবাব দিয়েছেন শিল্পী উদয় দেব, 'কার্টুনকে সাধারণ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।কার্টুনকে নয়া প্রজন্মের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য'।

কার্টুন সম্পর্কিত কী নেই এই মেলায়? কার্টুনের বই, কার্টুন আঁকা টিশার্ট, কার্টুনের ব্যাগ, পোস্টার, দৈনন্দিন ব্যবহারের নানান সামগ্রীর উপরেও নিপুণ তুলি, কলমের টানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কার্টুন। দেশের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ভারতীয় সিনেমার বিখ্যাত সব চরিত্র উঠে এসেছে এই কার্টুনে। তুলির এক আঁচড়ে পাল্টে যায় অনেক কিছু। তার হাতে কলমে নমুনা চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই মেলায়। ধরুন, পেপারওয়েট কিংবা কফি মাগ— দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন সামগ্রী।

এছাড়াও রয়েছে নামিদামি শিল্পীর অরিজিনাল আর্টওয়ার্কেরও বিপুল সম্ভাব। রয়েছে 'স্পেশ্যাল উডেন ডল'। সহজ করে বললে কাঠের পুতুল। বিখ্যাত ইলাস্ট্রেটর এবং কার্টুনিস্ট উদয় দেবের মস্তিস্কপ্রসূত এই কাঠের পুতুলের আর্টওয়ার্কটি। সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক, ভ্যান গঘ থেকে গুপী-বাঘা কে ঠাঁই পায়নি এই কাঠের পুতুলের দলে! রয়েছে কার্টুন পোস্টার, ছবি, কার্টুন ক্যালেন্ডার, কার্টুন আঁকা টি-শার্ট, ফ্রিজ ম্যাগনেট ও আরও কত কী! এবং তার দামও একেবারে সাধ্যের মধ্যেই। এছাড়াও মেলা চলার পাশাপাশি কার্টুন নিয়ে উৎসাহীদের জন্যে কার্টুন নিয়ে একাধিক কর্মশালা অর্থাৎ ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়েছিল।

এবার আসা যাক মেলার অন্যতম সেরা আকর্ষণ প্রসঙ্গে। রিড বেঙ্গলি বুক স্টোরের ঠিক বাইরেই ব্যবস্থা করা হয়েছে লাইভ কার্টুন-এর ব্যবস্থা। ব্যাপারটি ঠিক কীরকম? অভিষেক চৌধুরীর মতন নামিদামি সব শিল্পীরা যোগ দিয়েছেন এই এই কার্টুন উৎসবে। তাঁদের দিয়েই মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের ক্যারিকেচার বা কার্টুন আঁকিয়ে নিতে পারেন। সঙ্গে মিলবে তাঁদের সই। কার্টুন মেলার বাইরে ফুটপাথেও শিল্পীরা গ্র্যাফিটি, হরেক রকম রেখায় নাকি ভরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে এই শিল্পোৎসবে হাত লাগিয়েছেন সাধারণ শিল্পপ্রেমী মানুষেরাও।

তা আবার কবে দেখা পাওয়া যাবে এই 'কার্টুন মেলা'র? উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা শিল্পী উদয় দেবের কথায়, 'দেখুন প্রান্তিক অঞ্চলে থাকা মানুষদের মশয়েও কিন্তু একটি বিরাট অংশ দারুণ কার্টুনপ্রেমী। স্রেফ দূরত্ব এবং যোগাযোগের জন্য তাঁরা এই ব্যাপারটি থেকে বঞ্চিত থাকবে একজন কার্টুনপ্রেমী হিসেবে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। তাই আমরা এক বছর কলকাতায় পরের বছর কোনও মফঃস্বল অঞ্চলে করব। আগামী বছর এই কার্টুন মেলা বসবে বর্ধমানে'। সুতরাং, বিনোদন, অনাবিল আনন্দ এবং একইসঙ্গে চিন্তার খোরাক, নয়া সৃষ্টি ইত্যাদির স্বাদ যদি পেতে হয় তাহলে আপনাকে শরিক হতেই হবে এই 'কার্টুন মেলা'র।