চলতি বছরের ২৪ মে বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তীরাভা স্টেডিয়ামে শুরু হবে নীরজ চোপড়া ক্লাসিক। এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে নীরজ চোপড়া নিজেই এই ঘোষণা করেন। নিজের নামে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চলেছেন ভারতের সোনার ছেলে। যা নিয়ে নীরজ চোপড়া বেশ আনন্দিত ও গর্বিত ছিলেন। সাধারণত নিজের কৃতিত্ব নিয়ে খুব বেশি গর্ব প্রকাশ্য করেন না নীরজ। তবে এই মানুষটির মুখে এদিন ছিল বেশ গর্ব, সত্যিই আলাদা কিছু মনে ছিল তাঁকে। নীরজ চোপড়া বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি ভারতের জন্য, ভারতের অ্যাথলিটদের জন্য কিছু করতে পেরেছি।’
এই ইভেন্টটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান নীরজ। যদিও এবারের সংস্করণে শুধু পুরুষদের জ্যাভলিন ইভেন্টই থাকবে, ভবিষ্যতে আরও ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। নীরজ নিশ্চিত করেছেন যে তার বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের সহ-অ্যাথলিট এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। তাদের কৃতিত্বের কথাও তিনি আলাদাভাবে তুলে ধরেছেন। অ্যান্ডারসন পিটার্স (প্রাক্তন দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিক পদকজয়ী), থমাস রোহলার (প্রাক্তন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন), জুলিয়াস ইয়েগো (প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিক পদকজয়ী), কার্টিস থম্পসন (বর্তমানে বিশ্বের সেরা থ্রো – ৮৭.৭৬ মিটার), লুইজ মাউরিসিও দা সিলভা (প্যারিস অলিম্পিকের ফাইনালিস্ট)।
তিনি আরও বলেন, ‘আরও কিছু ইউরোপীয় এবং ভারতীয় অ্যাথলিট আসবে। আমি রোহিত (যাদব)-এর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করব ৩-৪ জন ভারতীয় অ্যাথলিট যেন অংশ নিতে পারে।’ এরপর হাসতে হাসতে যোগ করেন, ‘আর হ্যাঁ, আমি তো অংশ নিচ্ছিই!’ এরপরে নীরজ চোপড়া বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমি আর্শাদের (নাদিম, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন) সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনি বলেছেন কোচের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন। তবে তাঁর অংশগ্রহণ এখনও নিশ্চিত নয়।’
নীরজ বলেন, ‘এই ভাবনা যে আমাদের অ্যাথলিটরা বিশ্বের সেরা অ্যাথলিটদের সঙ্গে এক মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, সেটা ভেবেই আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। এটি ক্যাটেগরি এ ইভেন্ট, ফলে ভারতীয় অ্যাথলিটদের জন্য এটি খুবই উপকারি হবে। তারা বেশি পয়েন্ট পাবে, যা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতার জন্য সাহায্য করবে।’
এই ইভেন্ট নীরজকে এমন কিছু করতে বাধ্য করেছে যা তিনি আগে কখনও করেননি। নীরজ চোপড়া এমন ইভেন্ট আয়োজন করছেন, যেখানে তিনি সাধারণত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই সকলের নজর কাড়েন। নীরজ চোপড়া বলেন, ‘প্রথমে পঞ্চকুলায় এই প্রতিযোগিতা করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ফ্লাডলাইট নিয়ে সমস্যা ছিল। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স এবং তাদের সম্প্রচারের জন্য আলো ৬০০ লাক্সের হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু পঞ্চকুলায় তা কম ছিল।’
আরও পড়ুন … রাহুল দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ! উঠছে তদন্তের দাবি
তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘আগে শুধু প্রতিযোগিতা, ট্রেনিং, খাওয়া আর ঘুম – এসবই করতাম। এখন নতুন কিছু শিখছি। প্রথমে চ্যালেঞ্জিং লাগলেও, যদি কিছু আলাদা করতে চাই, তাহলে নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরোতে হবে।’
পঞ্চকুলার ফ্লাডলাইট সমস্যা ছিল এরপরেই তিনি নতুন অভিজ্ঞতা পান। নীরজ চোপড়া বলেন, ‘আমি জানতাম না আন্তর্জাতিক সম্প্রচারের জন্য আলো নির্দিষ্ট মানের হতে হয়।’ এখন তিনি সবকিছু খতিয়ে দেখছেন। নীরজ বলেন, ‘ওয়াশরুম কেমন, জিমের অবস্থা কেমন, হোটেলের ঘর, খাবারের মান, মাঠের ঘাস, ট্র্যাক, চেঞ্জিং রুম, দর্শকদের বসার ব্যবস্থা – সব কিছু দেখছি। কীভাবে আরও দর্শক টানা যায় তাও ভাবছি।’
আরও পড়ুন … আরও ১০ রান যোগ হতে পারত… KKR-র বিরুদ্ধে জিতেও কি খুশি নন GT অধিনায়ক শুভমন গিল?
এটা এখন তার ব্যক্তিগত গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর তিনি ছোটখাটো কোনও দিকও অবহেলা করছেন না। মজা করে বলেন, তিনি নিশ্চিত করতে চাইছেন বিদেশি অ্যাথলিটরা বেঙ্গালুরুর নতুন ও চমকপ্রদ টার্মিনাল ২-এ নামেন, যাতে প্রথম ছাপটাই ভালো হয়! এখানেই শেষ নয় – তিনি আয়োজকদের নতুন নতুন ভাবনা দিচ্ছেন, ‘টিমের মাথা খাচ্ছি’, যেমন: ‘হয়তো ৮৫ মিটার পেরোলে কোনও স্পেশাল সেলিব্রেশন রাখা যায়?’ এই নতুন অভিজ্ঞতাগুলোর চ্যালেঞ্জ থাকলেও, এটা স্পষ্ট যে তিনি এটি ভীষণ উপভোগ করছেন।
আরও পড়ুন … দলের ব্যাটাররা আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন… কেন রঘুবংশী ৯ নম্বরে? জানালেন KKR মেন্টর ব্র্যাভো
নীরজ চোপড়া বলেন, ‘লোকজন বলে দিয়েছে আমি সব জিতেছি। কিন্তু এই স্বপ্নটাও এখন বাস্তব হচ্ছে। এটা আমার রাডারে ছিল না, আপনাদের প্রশ্নেও কখনও ছিল না... এটা দেখায়, কীভাবে নতুন স্বপ্ন জন্ম নিতে পারে, আর আমরা নিজেদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’
দেশে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের মুখ হয়ে উঠেছেন নীরজ এবং তিনি আত্মবিশ্বাসী যে এই ধরনের বার্ষিক আন্তর্জাতিক মানের ইভেন্ট ভারতে অ্যাথলেটিকস আরও জনপ্রিয় করে তুলবে। সাধারণ মানুষের জন্য টিকিট থাকবে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই টিকিটের মূল্য ও বিতরণ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ইউরোপে প্রতিযোগিতা করি, তখন ভারতের সময় অনুযায়ী রাত ১১টা বা ১২টা বাজে – মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে বা ভালো করে দেখতে পারে না। এবার কিন্তু প্রথমবার ভারতের মাটিতে – মানুষ স্টেডিয়ামে বসেই সরাসরি দেখতে পারবে।’ তিনি উত্তেজনায় ফেটে পড়ছেন এবং নীরজ বলেন, ‘এটা যে সত্যি হচ্ছে, সেটা বিশ্বাস করাই কঠিন লাগছে, কিন্তু আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত।’