আরজি কর কাণ্ডে এখনও দোষীরা শাস্তি পাননি। এরই মাঝে আরও একাধিক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। গোটা অবস্থাটা নিয়ে উত্তাল হয়ে রয়েছে রাজ্য রাজনীতি। সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। পথে নেমেছেন তারকারাও। বারংবার ঘুরে ফিরে উঠে আসছে মেয়েদের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কাছে মনের কথা জানালেন অভিনেত্রী গুলশানারা খাতুন।
আরও পড়ুন: ‘মিঠিঝোরা’র ‘রাই’য়ের স্বপ্নপূরণ! মা বাবাকে নিয়ে নতুন বাড়িতে প্রবেশ আরাত্রিকার
আরজি কর প্রসঙ্গে প্রাথমিক বক্তব্য
আর কতদিন, আর কতগুলো, আর কতবার? আর কেন? বাড়ির লোকজন কোথাও বেরোলেই বলে ‘পৌঁছে ফোন করে দিস।’ তার মানে বাড়ির সবাই জানে বাইরে মেয়েরা নিরাপদ নয়। মেয়েটি চিকিৎসক ছিল, ও যেখানে এত বছর পড়েছে সেখানেও নিরাপদ ছিল না। বাড়িতে মেয়েরা নিরাপদ নয়, অফিসে নিরাপদ নয়, রাস্তায় নিরাপদ নয়। কোথাও নিরাপদ নয়। আর কতদিন এটা চলবে?
আর তাছাড়া বিষয়টা এবার ফ্যাটাল হয়ে যাচ্ছে। যেমন স্বপ্নদীপের মৃত্যু। যদিও স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা হয়ে গেছিল। আর সবের মাঝখান দিয়ে ক্ষীর খেয়ে গেল কিছু তারকা। আমি নিজে এই ইন্ডাস্ট্রির হয়েও এটা বললাম। আমার এসব বলতে আপত্তি নেই, কারণ আমার হারানোর কিছু নেই।
রাত দখল নিয়ে কী মত? পরবর্তী পদক্ষেপ কী এবার?
রাত দখলের বিষয়টা অনেকেই বোঝেননি আসলে। পুরুষতন্ত্র এবং মহিলা, এই দুটো বিষয় বা ফারাকটা অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না। রাত দখল ছিল হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাত ছিল ১৪ অগস্ট, যেখানে ভারতবর্ষের অধিকাংশ মেয়েরাই নিজেদের নিরাপদ মনে করছিল না। সারাদিনটাও আমরা দখল করতে পারি না। রাতটা তো আরও পারি না। পাড়ার মোড়ে আড্ডা থেকে বাইকবাজি সবটাই পুরুষরা করে থাকে। আমরা তাই রাত দখল করতে চেয়েছিলাম। সেই রাগ, ক্ষোভটা দেখাতে চেয়েছি। আমি খুব ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে পড়েছি এই বিষয়টা নিয়ে।
পরের পদক্ষেপ হিসেবে আমরা সবাই মিলে বসব। কিন্তু এই জমায়েত অরাজনৈতিক নয়। কোনও জমায়েত কখনই অরাজনৈতিক হতে পারে না। আর রাজনীতি মানেই কোনও নির্দিষ্ট দলের ঝাণ্ডা ধরা নয়। আজ আমি যে আপনার কাছে আমার বক্তব্য রাখছি সেটা আমার রাজনীতি, আপনি যে প্রশ্ন করছেন সেটা আপনার রাজনীতি। রাজনীতি একটা বোধ, একটা চেতনা আসলে। বিজেপির কিছু নেতা নেত্রী যখন বলছে আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে বসছি, রাজনৈতিক নেতা নয় তাহলে তাঁদের যদি হাতরাস বা উন্নাও নিয়ে প্রশ্ন করে তখন তাঁরা সেটাকে তৃণমূলের দালাল বলে প্রশ্নকর্তাকে দেগে দিতে পারেন না। এই বেসিক জায়গায় যদি বোঝাপড়া না তৈরি হয় তাহলে একটা বড় অভ্যুত্থান হবে না। বাংলাদেশে যেটা ঘটল সেটার বেস ছিল স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে দাও। আমাদের পরবর্তী এজেন্ডা হল আমরা কী চাইছি, কার জন্য চাইছি সেটা সুস্পষ্ট করা, এটা তো কেবল একটা নাম নয়। আমরা আসলে একটা সিস্টেমকে সরাতে চাইছি যে সিস্টেম বারবার ধর্ষিতাদের দিকে আঙুল তুলেছে। তাই আমাদের পরের এজেন্ডা, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। বেণীদি গত কয়েক মাস একা লড়াই করে চলেছে। অনেক কিছু সহ্য করেছে। এছাড়া, যৌন নির্যাতনের শিকার হলে তার বিচারের দল গঠন করতে হবে। ভিকটিম ব্লেমিং বন্ধ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। মুখ্যমন্ত্রীর না করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী করুক, স্বাস্থ্য মন্ত্রী না করলে পুলিশ মন্ত্রী করুক। কিন্তু পদত্যাগ চাই। আর সিসিটিভি ফুটেজ সবার সামনে আনতে হবে। সাধারণ মানুষ দেখুক সেদিন রাতে কারা ছিল। সবাই জানুক সবটা।
আরও পড়ুন: 'রাত জেগে শঙ্খ থেকে জল খেয়ে...' আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে চরম ট্রোল্ড ঋতুপর্ণা - রচনা
আরও পড়ুন: স্টার জলসা সত্যিই আসছে নতুন মেগা? 'জগদ্ধাত্রী' শেষ করে কীসের 'আহ্বান' জানাবেন 'জ্যাস' অঙ্কিতা?
'অল মেন আর পোটেনশিয়াল রেপিস্ট', এই মত নিয়ে কী বক্তব্য
আমি এটা লিখেছিলাম। এটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু এই পোস্টের যেটা কমেন্ট সেকশন ছিল সেটা আমার এই ধারণাকে আরও পোক্ত করে তুলল। আসলে আমাদের আক্রমণের ধরনটা এখন এতটাই ধর্ষণ-মুখী, তখন বলতেই হয় এটা।
আমার প্রেমিক আমার অনুমতি ছাড়া আমার গায়ে হাত দিতে পারে না। আমার কাকা আমায় আদর করার ছলে গায়ে হাত দিতে পারে না। কিন্তু এটা প্রায় প্রত্যেকটা বাড়িতেই হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ষিতার 'দর' নির্ধারণ
এই বিষয়ে একটা কথা বলি, ১৫ অগস্ট ভোর পাঁচটা। আমরা জমায়েতে ঠিক করি আলো ফুটলেই ব্যারিকেড সরে যাবে। তখনই কতগুলো বাইক এসে বলে 'এসব সরিয়ে দিন ম্যাডাম'। আমরা উত্তরে বলি যে আর কিছুক্ষণ সরে যাব। বলে যখন সরে যাচ্ছি তখন হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে 'এই মালটা অভিনয় করে না? কত টাকা লাগবে দিদি?' ঘুরে গিয়ে আমি প্রতিবাদ করি। সঙ্গে সঙ্গে বাকিরা ছুটে এসেছে। এই যে কিছু হলেই প্রথম কথাই বেরোয় রেট কত। কিছুদিন আগে কৌশিক করের সঙ্গে আমার যে ঝামেলা হয়েছিল সেখানেও তিনি আমার উদ্দেশ্যে লেখেন 'রেট কত?' মেয়েদের মূল্যায়ন যেন খালি দাম দিয়েই হয়। যে হোম মেকাররা সারাদিন সংসারে সময় দেন তাঁদের দাম দেওয়া সম্ভব? এই লড়াই আসলে গোটা পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে। মেয়েদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই এটা।
ধর্ষক মানেই মুসলিম, অপরাধের সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা
আজকাল সংখ্যালঘু নয়, অপরাধী মানেই যেন মুসলিম। আগে রাগ হতো না এটা নয়, কিন্তু এখন কষ্ট হয়। আমি নিজেকে কখনও মুসলিম বলে দাবি করিনি। আমি কোনও ধর্মাচরণ করি না। কিন্তু আজকাল আমায় বারবার দাগিয়ে দেওয়া হয় আমি মুসলিম। ছোট থেকে এটা শুনিনি। কিন্তু ৫-৬ বছর ধরে আমায় অনুভব করানো হচ্ছে আমি মুসলিম। বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই দেশটা আমার নয়। কিন্তু আমি খুব এক রোখা আমি সবাইকে বুঝিয়ে ছাড়ব এই দেশটা আমার। আমি এখানেই থাকব।
বাংলাদেশের প্রভাব এই দেশে
বাংলাদেশের গণআন্দোলন থেকে এই দেশের মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তবে আন্দোলনটা ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটা চালানো করার জন্য একটা নেতা বা নেত্রী দরকার। কোনও নেতৃত্ব নেই পশ্চিমবঙ্গে।