২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে প্রথমবারের জন্য ভোট দিয়েছিলেন কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। সেই সময় কারোর বয়স ৭৬, কারোর বয়স ৫০, কেউ আবার ২০, সেবার জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময় ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য একেবারে উৎসাহে টগবগ করছিলেন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। এরপর ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন তাঁরা ।এবার ফের বিধানসভা ভোট। ভোট এসেছে ভোটের নিয়মে। কিন্ত সাবেক ছিটবাসীদের মধ্যে কোথাও যেন ভাটা পড়েছে আগের সেই উৎসাহে। ভোট দেবেন অনেকেই। কিন্ত মনের কোণে খিচ খিচ করছে বঞ্চনার কাঁটা। ‘জমির কাগজ তো এখনও মিলল না। এটাই তো আমাদের অন্যতম দাবি ছিল।ভোট নিয়ে আর আমাদের বিশেষ কোনও উৎসাহ নেই।' আক্ষেপের সুরেই বলেন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন। দীর্ঘদিন ধরে ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। যে আন্দোলনের প্রধান মুখ ছিলেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। বর্তমানে তিনি বিজেপি শিবিরে রয়েছেন।তবে এখনও ছিটমহলবাসীর সুখ দুঃখে পাশে থাকেন তিনি।কিন্ত সাবেক ছিটমহলবাসীদের অনেকেরই প্রশ্ন, নানা সরকারি পরিষেবা থেকে আমরা বঞ্চিত। কর্মসংস্থানের সুযোগ পর্যাপ্ত নয়। অনেককেই ভিনরাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে।সাবেক ছিটমহলবাসীদের একাংশের দাবি ছিটমহল হস্তান্তর হয়েছে। কিন্ত জমি সংক্রান্ত কাগজ হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও নানা সমস্যা।ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সাবেক ছিটমহলে প্রচারে গিয়েছেন।শাসক, বিরোধী দুই শিবিরের কাছ থেকেই নানা আশ্বাসও মিলেছে।সরকারি বরাদ্দও মিলেছে সাবেক ছিটের উন্নয়নের জন্য।কিন্ত বাস্তবে উন্নয়ন কতটা হয়েছে তা নিয়ে নানা চর্চা চলছে মধ্য মশালডাঙা, করলা কিংবা পোয়াতুরকুঠি সাবেক ছিটে। এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাক। ২০১৫সালের ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহলে উড়ছিল জাতীয় পতাকা।দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান। নতুন সকালের আশায় দিন গোনা শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা।বাংলাদেশের ৫১টা ছিট যুক্ত হয়েছিল ভারতের ভূখন্ডের সঙ্গে।১১১টি ভারতীয় ছিট যুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশের সঙ্গে।কার্যত নাগরিকত্ব পান সেখানকার বাসিন্দারা। তবে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির কৃতিত্ব কাদের, এনিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে তরজাও কিছু কম হয়নি। এবারের ভোট বাজারেও চলছে সেই তরজা। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল। তোর্সা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এলাকায় রাস্তা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ এসেছে।পরিষেবাগত কিছু সমস্যাও থেকে গিয়েছে এখনও।একটা সময় ছিটমহলের বাইরে এসে শিক্ষা নেওয়া, চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা কাঠখড় পোড়াতে হত বাসিন্দাদের। অনেকেই অন্য কাউকে অভিভাবক সাজিয়ে কোচবিহার বা দিনহাটার স্কুল কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হতেন। তবে সেই ‘নেই রাজ্যের’, সেই উপেক্ষার, নাগরিকত্ব না থাকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাঁরা।কিন্ত তবুও ভোটের আগে মন খারাপের সুর ভাসে সাবেক ছিটে।কিন্ত ভাঙা মন নিয়েও সাবেক ছিটের বাসিন্দারা অনেকেই গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে চান।