কয়েকদিন আগে নয়াদিল্লির অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতরে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কারণ সাংসারিক অশান্তির মতোই অশান্তি শুরু হয় সেখানে। আপত্তি তুলেছিলেন শোভনের বান্ধবী শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেই মাত্রা এতটাই ছিল যে, বিজেপি দফতরে গিয়েও তাঁর আপত্তিতে বাংলা ছবির নামী অভিনেত্রী এবং বিধায়ককে দিল্লি থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল শূন্য হাতে। দেবশ্রীকে বিজেপি দফতরে দেখে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন শোভন–বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দেবশ্রীর বিধানসভা কেন্দ্র রায়দিঘিতে গিয়ে শোভন সরাসরি ক্ষমা চাইলেন গত বিধানসভা নির্বাচনে দায়িত্ব নিয়ে দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য।এখন শোভন–বৈশাখী বিজেপিতে। তাই মানুষের কাছে গিয়ে আগের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে জনভিত্তি বজায় রাখতে চাইলেন। তখন খোঁচা দিয়ে দেবশ্রী বললেন, ‘ওঁকে তো আমায় জেতানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ক্ষমা চাইবার কী আছে!’ আসলে এই বুদ্ধিটা দিয়েছেন বৈশাখী বলে সূত্রের খবর। কারণ তিনি আগেই বলেছিলেন, ‘শোভনবাবু নিজের গড়ে যাচ্ছেন। অন্যের নয়। অন্যদের গড় তিনি তৈরি করেছেন।’ সুতরাং জেলাজুড়ে চর্চা তুঙ্গে উঠেছে।বিজেপি’র হয়ে শোভন–বৈশাখী জুটি প্রায় রোজই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সভা এবং পদযাত্রা করছেন। এবার গিয়েছিলেন রায়দিঘিতে। সেখানেই শোভন বলেন, ‘গতবার ওই বিধানসভা কেন্দ্রে দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতা জানান, ২০১৬ সালে রায়দিঘিতে দেবশ্রীর আবার টিকিট পাওয়া ছিল শোভনের সৌজন্যেই। ২০১১ সালে প্রবল মমতা ঝড়ে সিপিএমের কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে হারিয়ে রায়দিঘিতে জিতেছিলেন দেবশ্রী। আর শোভন জানিয়েছেন, দিল্লির বিজেপি দফতরে দেবশ্রীকে দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘যে মানুষ টোটো কেলেঙ্কারিতে লাখ লাখ টাকা চুরিতে যুক্ত, তিনি যে দলে থাকবেন, আমরা সে দলে যোগ দিতে পারব না।’এখন সমীকরণ বদলে গিয়েছে। শোভনের সঙ্গে দেবশ্রীর দূরত্ব বেড়েছে। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত— উভয় স্তরেই। এই পরিস্থিতিতে প্রথম দেবশ্রীর রায়দিঘিতে পদার্পণ করলেন শোভন। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখীও। সেখানে দাঁড়িয়েই শোভন বলেন, ‘ওঁকে আমিই এখানে দায়িত্ব নিয়ে জিতিয়েছিলাম। তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ আর বৈশাখী বলেন, ‘উনি এলাকার মানুষকে টোটো দেবেন বলে কিছু টাকাপয়সা তুলেছিলেন। কিন্তু লোকজন টোটো পাননি। টাকাও ফেরত পাননি।’এই টিকা–টিপ্পনীর পাল্টা রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘আমি সিনেমা করছি, কী করছি না, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি রায়দিঘিতে গিয়ে আমার নামে কিছু বাজে কথা বলে কয়েকটা ভোট বেশি পান, তা হলে বলুন! আপনার আর বৈশাখীর অন্দরমহলে তো আমি ঢুকি না!’ আর বৈশাখী সম্পর্কে দেবশ্রীর জবাব, ‘বৈশাখী বলছে, আমার সিনেমার কেরিয়ার শেষ। উনি কে আমার সিনেমা নিয়ে কথা বলার! আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি। রেখা এখন সিনেমা করছেন না বলে কী কেউ তাঁকে ভুলবে? দেবশ্রী রায়কেও কেউ ভুলবেন না। আমি মুখ খুললে কি ভালো হবে?’ এই হুঁশিয়ারির পর এখন রাজ্য–রাজনীতি সরগরম।