পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বিলি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিদ্রোহ চরমে উঠেছে। প্রথমে বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, তারপর মনোরঞ্জন ব্য়াপারী, আবার একই সুর ইসলামপুরের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীর। এই আবহ এখনও অব্যাহত রইল। কারণ এবার মগরাহাট পশ্চিমের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। এই মগরাহাট দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। যেটা তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি। আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে রয়েছে গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। সেখানে এমন বিদ্রোহ দেখা দেওয়ায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। প্রাক্তন সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন স্পষ্ট সংবাদমাধ্যমে জানান, দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ দলাদলি রুখতে তাঁর মনোনীত ৫০ শতাংশ প্রার্থীকে প্রতীক দিয়েছে দল। বাকি ৫০ শতাংশ এসেছে অন্য পথে। এই অন্য পথ বলতে তাঁর অভিযোগের তির মানবেন্দ্র মণ্ডলের দিকে। যিনি মগরাহাট–১ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘দলের মধ্য়ে গ্রুপবাজি রয়েছে। তাই ৫০–৫০ ভাগ হয়েছে। দল আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেনি। তাই দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ বিধায়কের এই মন্তব্য ডিপ্রেসন থেকেই এসেছে বলে পাল্টা মন্তব্য় করেন মানবেন্দ্র।
এদিকে এই আকচা–আকচিতে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এমনকী সুবিধা হয়ে যেতে পারে বিরোধীদের। যদিও নির্দলদের জন্য দলে জায়গা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে গিয়াসউদ্দিন মোল্লার স্পষ্ট বক্তব্য, ৪৯ হাজার ভোটে জিতেছেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনে সবথেকে বেশি লিড ছিল তাঁর বিধানসভায়। আর এখন যাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। এই কথা তিনি দলকে জানাবেন। এমনিতেই বিরোধীরা প্রার্থী দিতে নানা জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে যদি শাসকদলে এমন ডামাডোল দেখা দেয় তাতে আখেরে ক্ষতি হবে তৃণমূল কংগ্রেসের।
ঠিক কে, কি বলছেন? অন্যদিকে এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য ইতিমধ্যেই কানে গিয়েছে দলীয় নেতৃত্বদের। ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমি দলকে জানিয়ে দিচ্ছি এদের সঙ্গে আমি রাজনীতি করতে পারব না। কারণ দলের যা নিয়ম তা মেনে আমি প্রার্থী তালিকা পাঠাই। সকলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। পরে দেখলাম ৫০–৫০ ভাগ হয়ে গিয়েছে। দলাদলি মেটাতে এই ভাগাভাগি হয়েছে। ৫০ শতাংশে আমাদের মনোনীত প্রার্থীরা থাকলেও বাকি ৫০ শতাংশে এমন লোকজন যাদের দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই। মানবেন্দ্র মণ্ডলকে দায়িত্ব দিয়েছে। উনি প্রার্থী করেছেন।’ পাল্টা মানবেন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘দল অর্ধেক টিকিট ভাগ করে দিয়েছে। আসলে দল বুঝেছে কাকে কী দেওয়া দরকার। তাই সেভাবেই সবটা হয়েছে। আসলে অর্ধেক টিকিট পেয়ে উনি ভেঙে পড়েছেন। মানসিক অবসাদে ভুলভাল কথা বলছেন।’