দিল্লির হয়ে শেষবার ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন বিরাট কোহলি। প্রায় ১২ বছর পর রঞ্জি ট্রফিতে ফিরে এসেছেন কিং কোহলি। তার এই ফিরে আসার পরে আবেগে ভাসছে গোটা দিল্লি দল। দিল্লি দলের ম্যানেজার মহেশ ভাটি, যিনি কোহলিকে অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে কোচিং করিয়েছিলেন, তিনি বিরাট কোহলির মধ্যে অনেক কিছু লক্ষ্য করেছেন। ম্যাচের আগে কোহলি যখন দিল্লির অনুশীলনে এসেছিলেন, তখন মহেশ ভাটি কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন তারা যেন বিরাট কোহলির কিট বহন করে তাদের সিনিয়রকে সাহায্য করেন।
কিন্তু কোহলি হাসিমুখে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। তিনি নিজেই তার কিট বহন করেন এবং নেটে অনুশীলনের জন্য রওনা দেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মহেশ ভাটি বলেন, ‘সে এখনও আগের মতোই আছে। সকলের জন্য সে একই বিরাট রয়েছেন। প্রথম দিনের প্রশিক্ষণে, সে ড্রেসিং রুমে গিয়ে নিজের কিট ব্যাগ নিজেই বহন করল। পুরো দিন অনুশীলন করল এবং তারপর নিজের কিট ব্যাগ নিজেই ফেরত নিয়ে গেল।’
আরও পড়ুন… ভিডিয়ো: জসপ্রীত বুমরাহ তো বলিউড কিংবদন্তি দিলীপ কুমারের মতো: কেন এমন বললেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর?
মহেশ ভাটি বলেন, ‘আমি বললাম, ‘বিরাট, তোমায় সাহায্য করে দি?’ সে উত্তর দিল, ‘ভাইয়া, কী বলছো? এটা আমার খেলার জিনিস, আমি নিজেই নিয়ে যাব।’ সে নিজের কাঁধে কিট ব্যাগ চাপিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকে পড়ল।’ কঠোর অনুশীলন শুরুর আগে, কোহলি নিজের ক্রিকেট গিয়ার খুলে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ভাটির সঙ্গে আন্তরিক কথোপকথনে মেতে ওঠেন। তাদের দুজনকে কথার মাঝে হাসিতে মেতে উঠতেও দেখা যায়।
আরও পড়ুন… টাকা পাচ্ছেন না বিদেশিরা, BPL-এর সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে এল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
মহেশ ভাটি বলেন, ‘আমি যখন কোহলির অনূর্ধ্ব-১৯ কোচ ছিলাম, সে আমার অধীনেই খেলেছে। সেই সময় থেকেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি মজা করতে ভালোবাসি, ও-ও তাই। আমরা পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে হাসছিলাম। প্রথমেই সে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাইয়া, ম্যাটিং উইকেটে এখন আর ছেলেরা খেলে না?’ আমি বললাম, ‘তুই পাগল হয়েছিস! ম্যাটিং এখন কোথায়? দিল্লিতে এখন আর কোথাও ম্যাটিং উইকেট নেই। সে বলল, ‘আমি ম্যাটিং উইকেটে কাট শট আর পুল শট খেলতাম। পুল মারার মজাই আলাদা ছিল, শব্দটা দারুণ আসত।’
আরও পড়ুন… ভিডিয়ো: অবশেষে ‘আঙ্কল কোহলি’র সঙ্গে ছোট্ট কবিরের সাক্ষাৎ! সতীর্থের ছেলের স্বপ্ন সত্যি করলেন বিরাট
এরপরে মহেশ ভাটি বলেন, ‘যে খেলোয়াড়রা ম্যাটিং উইকেটে খেলেছে, তারা কাট আর পুল শট দারুণভাবে খেলে, স্বচ্ছন্দে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। পুরনো খেলোয়াড়রা, বিরাটসহ, এটা খুব ভালোভাবে করে। কারণ তারা ম্যাটিংয়ে খেলে অভ্যস্ত ছিল। বিরাট সেই সময়ের স্মৃতিও মনে করল, যখন তারা অসমান মাঠ ও লম্বা ঘাসের মধ্যে খেলত। তখন ম্যাটিং উইকেটই তাদের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল। বাউন্সার, কাট, পুল আর শর্ট বল ছিল ক্রিকেটের স্বাভাবিক দৃশ্য, আর বিরাট সে সব নিয়েই কথা বলছিল। আমি বললাম, ‘ম্যাটিং উইকেটের যুগ শেষ, ক্রিকেট অনেক বদলে গেছে।’ সে বলল, ‘ক্রিকেটের আসল মজা তো তাতেই ছিল।’
দিল্লি বনাম রেলওয়েজের মধ্যে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচটি ৩০ জানুয়ারি বিরাটের হোম গ্রাউন্ড অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। উত্তেজনা এতটাই বেশি যে ম্যাচটি জিওসিনেমায় সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। তবে মাঠে গিয়ে যারা এই ম্যাচ উপভোগ করবেন, তাদের জন্য কোহলির এক দশকেরও বেশি সময় পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরা নিঃসন্দেহে স্মরণীয় এক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।