গত বছর (২০২৪ আইপিএল) ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্স ৬ উইকেটে ২৬১ রান করেছিল। সেই রান তাড়া করতে নেমে পঞ্জাব কিংস ঝড় তুলেছিল। সেই সময়ে বড় অসহায় লাগছিল কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারকে। সেবার আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল পঞ্জাব। জনি বেয়ারস্টোর অপরাজিত ১০৮ রানের উপর ভর করে পঞ্জাব কিংস আট উইকেটে জয়লাভ করেছিল। ২০২৪ আইপিএলে কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হলেও, পঞ্জাবের বিরুদ্ধে হারটা কাঁটা হয়ে থেকে গিয়েছিল।
২০২৫ মরশুমে শ্রেয়স কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে যোগ দিয়েছেন পঞ্জাব কিংসে। এই মরশুমে তিনি পঞ্জাব দলের অধিনায়ক। ২৬.৭৫ কোটি টাকা খরচ করে শ্রেয়সকে দলে নেয় পঞ্জাব কিংস। আর শ্রেয়সও হতাশ করেননি পঞ্জাবকে। তাঁর নেতৃত্বে পঞ্জাব ৬ ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে। ২টি ম্যাচ হেরেছে। শ্রেয়স নিজেও ভালো খেলছেন। অরেঞ্জ ক্যাপ দখলের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। ২০৪.৯১ স্ট্রাইকরেটে ৬২.৫০ গড়ে ২৫০ রান করে ফেলেছেন শ্রেয়স।
অধিনায়ক হিসেবে দক্ষতার শীর্ষে নিজেকে তুলে ধরেছেন শ্রেয়স
আর অধিনায়ক হিসেবে শ্রেয়স সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অর্জন করেছে মঙ্গলবার। বাংলার নববর্ষের দিন। তাঁর নেতৃত্বে কেকেআর-এর বিরুদ্ধে ১১১ রান ডিফেন্ড করেছে পঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের পুঁজি রক্ষা করে জয় ছিনিয়ে নেয় পঞ্জাব। কেকেআর-এর বিরুদ্ধে শ্রেয়স আইয়ারের বিচক্ষণতা এবং কৌশলগত উজ্জ্বলতা যেমন দেখা গিয়েছিল, তেমনি তাঁর সহজাত প্রবৃত্তির প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাসও ফুটে উঠেছিল।
তিনি এদিন বোলারদের দুর্দান্ত ভাবে ব্যবহার করেছেন। রমনদীপ সিং-এর জন্য সিলি পয়েন্টে ফিল্ডার রাখেন। এবং যুজবেন্দ্র চাহালের বলে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন রমনদীপ। তিনি এমন ভাবে ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন যে, কেকেআরের ব্যাটসম্যানরা প্রতিটি রানের জন্য আকুল হয়ে উঠছিলেন। যদিও এই ম্যাচে শ্রেয়স আইয়ার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন, তবুও তিনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেটা সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে। ৫৬.০৯% জয়ের হার নিয়ে পঞ্জাব কিংসের একমাত্র সফল অধিনায়ক আপাতত শ্রেয়স আইয়ার। এবার ভারত যদি শ্রেয়সকে উপেক্ষা করা অব্যাহত রাখে, তবে এতে তাদের নিজেদের বিপদ বাড়বে।
এত দক্ষ হওয়র পরেও কি ভারত অধিনায়ক হিসেবে দেখা যাবে শ্রেয়সকে?
শ্রেয়স আইয়ারের অধিনায়কত্ব বা তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতা নিয়ে কখনও সেভাবে প্রশ্ন ওঠেনি। অধিনায়ক হিসেবে শ্রেয়স আইয়ার প্রতি মুহূর্তে নিজের দক্ষতা, বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে আইপিএলের মতো হাইভোল্টেজ টুর্নামেন্টে এমন অনেক দক্ষ নেতা রয়েছেন, যাঁরা কখনও দেশকে নেতৃত্ব দেননি।
৩০ বছর বয়সী মুম্বই ক্রিকেটারের তিনটি আন্তর্জাতিক ফর্ম্যাটের মধ্যে কেবল একটিতেই ভারতীয় একাদশে জায়গা নিশ্চিত রয়েছে। একজন বিচক্ষণ, বহুমুখী, অভিযোজনযোগ্য চার নম্বর ব্যাটার হিসেবে তাঁর অপরিসীম মূল্য গত মাসে ৫০ ওভারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চেয়ে বেশি স্পষ্ট ছিল না, যখন তিনি সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে সফল ভাবে ভারতকে রান-তাড়া করে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, যার ফলে রোহিত শর্মা তাঁকে ‘সাইলেন্ট হিরো’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সফরে নাও যেতে পারেন কোহলি, বুমরাহ, বড় প্রশ্ন থাকছে রোহিতকে নিয়ে- রিপোর্ট
অথচ গত মরশুমের রঞ্জি ট্রফিতে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, মুম্বইয়ের হয়ে শ্রেয়স না খেলায় কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছিলেন। সেই নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। এবার অবশ্য মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলেছেন, ভালো পারফরম্যান্স করেছেন। তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি শ্রেয়স আইয়ার।
আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে টি-টোয়েন্টি খেলেননি। এই মুহূর্তে শ্রেয়সকে টি২০ অধিনায়ক করার কোনও সম্ভাবনা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগামী বছর ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ধরে রাখতে ভারত যখন তাদের সম্ভাব্য কোর গ্রুপ নিয়ে কাজ করছেন, তখন অনেকেই ভাবছেন, জাতীয় নির্বাচকেরা কতক্ষণ শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটিংকে উপেক্ষা করবেন! তাঁর অধিনায়কত্বের কথা বাদ দিলেও, শ্রেয়সের ব্যাটিংকে কি উপেক্ষা করা সম্ভব?
আরও পড়ুন: স্টার্কের কামাল, DC-র নিশ্চিত হারকে বদলে দিলেন জয়ে, IPL 2025-এর প্রথম সুপার ওভারে কাঁদতে হল RR-কে
গত বছর জুনে টি-টোয়েন্টি থেকে রোহিত শর্মা অবসর নেওয়ার পর, সূর্যকুমার যাদবেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রয়োজনে দলের স্বার্থে নিজের পছন্দের তিন নম্বর পজিশন ছেড়ে দিচ্ছেন। স্পষ্টতই, আগামী বছর ভারতের টি২০ বিশ্বকাপ অভিযানে সূর্যের নেতৃত্ব না দেওয়ার জন্য কিছু অসম্ভব এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা লাগবে। তবে শ্রেয়স আইয়ার নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারলে, ২০ ওভারের দলে তাঁর ফিরে আসার সুযোগ থাকবে। সম্ভবত অগস্টে বাংলাদেশে ভারতের পরবর্তী সংক্ষিপ্ত ফর্ম্যাটের সিরিজের জন্য তিনি সহ-অধিনায়ক হতে পারেন। আর কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে তিনি ভারত অধিনায়ক হবেন না! সময়ই অবশ্য এই জল্পনার উত্তর দেবে!