এক কথায় অবিশ্বাস্য ইনিংস। ইংল্যান্ডের সব স্বপ্নকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিলেন জোশ ইংলিস। একাই দায়িত্ব নিয়ে ইংল্যান্ডের মুখের গ্রাস কাড়লেন তিনি। দেখিয়ে দিলেন বিশ্ব ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জায়গাটা টলানো মোটেও সহজ নয়। আইসিসি টুর্নামেন্টে অজিরা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেটা শনিবার হাড়েহাড়ে টের পেল ইংল্যান্ড। নেহাৎ-ই ভাঙাচোরা দল। প্রথম সারির পাঁচ ক্রিকেটারকে ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যে মোটেও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। মাটি আঁকড়ে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। আর এদিন অজিদের হয়ে একাই দায়িত্ব নিয়ে লড়াইটা করলেন ইংলিস। অবশ্য ভালো খেলেছেন ম্যাথু শর্ট, মার্নাস ল্যাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরাও। তবে ইংরেজদের বধের আসল কারিগর হলেন ইংলিস-ই।
শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চতুর্থ ম্যাচে রেকর্ড রানের পাহাড় গড়েছিল ইংল্যান্ড। টস হেরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ৩৫১ রান করেছিল তারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে যা সর্বাধিক। ১৬৫ রান করে নজির গড়েছিলেন ওপেনার বেন ডাকেটও। প্রসঙ্গত, ভারতের বিরুদ্ধে শেষ এক দিনের ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন ডাকেট। তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। এদিন তিনি শুধু খেললেন না, ইংল্যান্ডের রেকর্ডের পথে নিজের রেকর্ডও করলেন। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ ওপেনার। কিন্তু ডাকেটের পালটা এদিন কুম্ভ হয়েছিলেন ইংলিস। আর ইংলিসের সৌজন্যে শেষ হাসি হাসল অজিরাই।
আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই… চাঞ্চল্যকর দাবি পাক প্রাক্তনীর
এদিন ডাকেট ১৬৫ রানের ইনিংস খেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটি ইনিংসে কোনও ব্যাটারের করা সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়েন। ২১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। ২০০৪ সালে আমেরিকার বিরুদ্ধে ১৪৫ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের নেথান অ্যাস্টল। সেই নজির টপকে যান ডাকেট। দলগত রেকর্ডও হয়েছিল ২০০৪ সালে। আমেরিকার বিরুদ্ধে ম্যাচেই ৩৪৭ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। সেই নজিরও এদিন ভেঙে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ৩৫১ রানের হাত ধরে। তবে ইংল্যান্ডের নজির ভেঙে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ দলগত রান করে অস্ট্রেলিয়া। এমন কী রেকর্ড রান তাড়া করে তারা জয়ের নজির গড়ে।
টস জিতে এদিন বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের এই সিদ্ধান্ত প্রথম ইনিংসে অন্তত বুমেরাং হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল। ইংল্যান্ড অবশ্য প্রথমে ব্যাট করতে নামলে, ম্যাচের একেবারে শুরুতেই, দ্বিতীয় ওভারে ধাক্কা খায়। দলের ১৩ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফিল সল্ট। এরপর ছয় ওভার চলাকালীন দ্বিতীয় উইকেট পড়ে। জেমি স্মিথ ১৫ করে আউট হন। তখন দলের স্কোর ৪৩। তবে তৃতীয় উইকেটে জো রুটকে সঙ্গী করে লড়াই শুরু করেন ডাকেট। পরের ২৫ ওভার লড়াই চালিয়ে যায় ডাকেট ও রুট জুটি। ১৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে এই জুটি। এতেই ভিত পোক্ত হয় ইংল্যান্ডের। তবে ডাকেট শতরান করলেও, রুট ৬৮ রান (৭৮ বলে) আউট হয়ে যান।
জো রুট সাজঘরে ফেরার পর নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড। এর পর বড় রান কেউ করতে পারেননি। হ্যারি ব্রুক ৩, অধিনায়ক জস বাটলার ২৩, লিয়াম লিভিংস্টোন ১৪, ব্রিডন কার্স ৮, জোফ্রা আর্চার অপরাজিত ২১ এবং আদিল রশিদ অপরাজিত ১ করেন। তবে ৩টি ছয়, ১৭টি চারের হাত ধরে ডাকেটের ১৪৩ বলে ১৬৫ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডকে ৩০০ রানের গণ্ডি পার করতে সাহায্য করে। নয়ে জোফ্রার ২১ রানও বড় প্রাপ্তি। তার জন্য ইংল্যান্ড সাড়ে তিনশোর গণ্ডি টপকায়।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার। ট্র্যাভিস হেড আউট হন ৬ রানে। ৫ রানে ফেরেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। ২৭ রানের মধ্যে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে মারাত্মক চাপে পড়ে গিয়েছিল অজিরা। স্বাভাবিক ভাবে যে দুই ব্যাটারের উপর দলের ভরসা ছিল, তাঁরা রান পাননি। তবে অস্ট্রেলিয়া লড়াই থেকে এক ইঞ্চিও সরেনি। ওপেনার ম্যাথু শর্ট ও ল্যাবুশেন জুটি বাঁধেন। ৯৫ রান যোগ করেন তাঁরা। ৪৭ রান করে আউট হন ল্যাবুশেন। ৬৩ রান করে আউট হন শর্ট।
আরও পড়ুন: গিলের শতরানের জন্য নিজের হাফসেঞ্চুরি বলি দেন কেএল, যদি হার্দিক হতেন… নেটপাড়ায় পুরনো আতঙ্ক
এই দুই তারকা সাজঘরে ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান ইংলিস। পাশে পান অ্যালেক্স ক্যারিকে। দু'জন মিলে ১১৬ বলে ১৪৬ রানের পার্টনারশিপ পড়েন। এখানেই এগিয়ে যায় অজিরা। এর পর ৬৯ রান করে ক্যারি আউট হলে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে সঙ্গত করেন ইংলিসকে। ১৫ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। ৮৬ বলে অপরাজিত ১২০ রান ইংলিশের। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ছ'টি ছক্কা এবং আটটি চারে। শেষ পর্যন্ত ১৫ বল বাকি থাকতে ইংলিস ছক্কা মেরে খেলা শেষ করলেন। ৫ উইকেটে ৩৫৬ করে ইতিহাস লেখে অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড রান করে তারা জয় ছিনিয়ে নেয়।