‘ভূতুড়ে ভোটার’ নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য–রাজনীতি। এই অসাধু পথ বঙ্গ–বিজেপির ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেতার কৌশল বলে দাবি করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়টি নিয়ে কোর কমিটি গড়ে দিয়েচেন তিনি। যাঁরা রাস্তায় নেমে কাজ করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার কোর কমিটির বৈঠক হয় তৃণমূল ভবনে। তারপর তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা হাজির হন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের দাবি, চক্রান্ত চলছে। সেটা রুখতে পাসপোর্ট, আধার কার্ডের মতো ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর রাখতে হবে ভোটার কার্ডেও। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সমাবেশ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ‘ভূতুড়ে ভোটার’ ঢুকিয়ে বাংলা দখলের ছক কষছে। এরপরই তেড়েফুঁড়ে নেমে পড়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা।
এদিকে ভিনরাজ্যের বাসিন্দাদের নাম তোলা হচ্ছে বাংলার ভোটার তালিকায় বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ‘ভূতুড়ে ভোটার’ ধরা পড়েছে নানা জেলা থেকে। এই ইস্যুতে নয়াদিল্লির নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বাড়ান তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা যুক্তি দেন, এক এপিক নম্বর থাকতেই পারে দুই রাজ্যের দুই বাসিন্দার। সেক্ষেত্রে কেউই ভুয়ো ভোটার নয়। এই কথা মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘বাংলার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করছে বিজেপি। একই এপিক নম্বরে ভিন রাজ্যে ভোটার কার্ড থাকা চলবে না। আধার কার্ড, পাসপোর্টে যেমন ইউনিক নম্বর থাকে তেমনভাবে ভোটার কার্ডেও ইউনিক আইডি চালু করতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ৫৬ জন মৎস্যজীবীকে আটকে রেখেছিল মায়ানমার, মাছ নিয়ে ছেড়ে দিল
অন্যদিকে আজ এই ‘ভূতুড়ে ভোটার’ থাকার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান সুব্রত বক্সি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেদের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাঁরা। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই বাংলায় উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তাঁর দাবি ছিল, নির্বাচনে সচিত্র পরিচয়পত্র চালু করতে হবে। এবার ৩২ বছর পর ভোটের জন্য এপিক কার্ডের সংস্কার নিয়ে নতুন আন্দোলন শুরু হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। আর তাতেই যেন চাপে পড়ে গেল বিজেপি। তাই ফিরহাদের বক্তব্য, ‘ঘুমন্ত নির্বাচন কমিশনকে জাগাতে তৃণমূল কংগ্রেসের এই অভিযান। বিধানসভা নির্বাচনে মাটি শক্ত করতে বিজেপি ভুয়ো ভোটার ঢোকাচ্ছে বাংলায়। তৃণমূল সেটার বিরুদ্ধে লড়বে।’
এছাড়া দিল্লি, মহারাষ্ট্রে এভাবেই বিজেপি জিতেছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই তথ্য সামনে নিয়ে আসার পরই এখন হইচই পড়ে গিয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা কদিন আগে নির্বাচন কমিশনের দফতরে এসে হম্বিতম্বি করে যান। এবার ‘ভূতুড়ে ভোটার’ নিয়ে ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘অনলাইনে যাঁরা নাম তুলছেন, তাঁদের বিষয়ে ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করতে হবে। ভিন রাজ্যের কেউ বাংলায় এসে ভোট যাতে না দিতে পারেন সেটাও নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।’ আর অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘নির্বাচন কমিশনের ২৮ নম্বর রুলে যা রয়েছে সেটা লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনকে আইন মেনে কাজ করতে।’