মঙ্গলবার দুপুরে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। তারপর থেকে নানা দৃশ্য সামনে আসে। দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র ছেলে সৃঞ্জয় ওরফে প্রীতম দাশগুপ্তের মৃত্যু হয়েছে। তার পরের ঘটনা মোটামুটি সকলেরই জানা। সংবাদমাধ্যমে রিঙ্কুর বক্তব্য সামনে আনা হয়। দিলীপ ঘোষের পুত্রসুখ হারিয়ে পুত্রশোকের কথাও সকলেই শুনেছেন। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিঙ্কু মজুমদারকে কড়া আক্রমণ করছেন কিছু নেটাগরিকরা। দিলীপ ঘোষের দিকেও তা মাঝেমধ্যে ধেয়ে আসছে। এবার এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষ, রিঙ্কু মজুমদারের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
বিজেপি নেতা–নেত্রীর পাশে বিজেপি নেতাদের দাঁড়ানো উচিত ছিল। সেখানে তাঁদের বিয়েতে দেখা গেলেও সন্তান হারানোর শোকে সেভাবে দেখা গেল না। অথচ বিজেপির বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসকে পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল। তাই তো ফেসবুক পোস্টে কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘পুত্রশোকে কাতর রিঙ্কু মজুমদারকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই। দিলীপ ঘোষকেও জানাই সমবেদনা। রাজনৈতিক মতপার্থক্য আলাদা। এটা এক পরিচিত হিসেবে মানবিক কর্তব্য। সৃঞ্জয়/প্রীতমের মৃত্যু কীভাবে, নানা সূত্রে খবর আসছে। তাতে আর যাই হোক দিলীপবাবু বা রিঙ্কুদেবীর কিছু করার ছিল না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু জানোয়ার যেভাবে এনিয়ে পুত্রহারা রিঙ্কুকে আক্রমণ করল, তাতে স্পষ্ট, হাতে আধুনিক ফোন থাকলেই সমাজের সবাই সভ্য হয় না।’
আজ, বুধবার পুত্রশোক বুকে নিয়েই প্রাতঃভ্রমণ করতে আসেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ইকোপার্কে রোজকার মতো ব্যায়াম করলেও মনমরা ছিলেন তিনি। তাই তো এই নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেলে বুঝতে পারব। বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকত। একা থাকেনি সেভাবে। ড্রাগের সমস্যা ওর আগে থেকেই ছিল। ওর কাউন্সেলিং চলছিল। ওর অফিসের ডাক্তার দেখত। হঠাৎ করে কেন হল? সেটা রিপোর্ট এলে বুঝতে পারব। একটা তরতাজা ছেলে। আজকের যুবসমাজের মধ্যে নেশার যে কি প্রভাব, তার এটা একটা নমুনা। ঠিক কি হয়েছিল বলার আগেই তো ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। আমাদের সবার কাছে এটা একটা বড় শিক্ষা। আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে কি করছে? তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। তারপরেও এত বড় রিস্ক থেকে যায়। এটাই চিন্তার বিষয়।’
আরও পড়ুন: কেন শুভেন্দু বারবার সিপিএমকে আক্রমণ করছেন? দুই দলের দু’রকম তথ্যে সরগরম
এইসব কথা দিলীপ ঘোষ নিজে মুখে বললেও এমন ঘটনা যে তাঁকে মর্মাহত করেছে সেটা তাঁর কথাবার্তাতে স্পষ্ট। তবে রিঙ্কু মজুমদার অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। সেটা গতকাল তাঁকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। এখন অনেকটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। তার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে। যার জবাব আজ কুণাল ঘোষ লিখেছেন, ‘আমি আমার এই পোস্টের সঙ্গে ‘আমি ঝুমা’ প্রোফাইলের স্ক্রিনশট দিলাম। আমি সরাসরি এঁকে চিনি না। কিন্তু পোস্ট দেখে বুঝি ইনি দিলীপবাবু–রিঙ্কুর শুভানুধ্যায়ী, বিয়ে কিংবা গতকালের শ্মশান, সর্বত্র সঙ্গে থাকেন। তাঁর পোস্টে কিছু ইঙ্গিতবাহী ক্ষোভ আছে। সেই গুরুত্ব থেকে আমি এটি দিলাম। আবার বলছি, তরতাজা সুদর্শন ছেলেটির অকালমৃত্যু চরম দুর্ভাগ্যের। কিন্তু তার জন্য যারা রিঙ্কু এবং তাঁর বিয়ে নিয়ে সমাজমাধ্যমে অসভ্যতা করছে, সেগুলো ভরপুর জানোয়ার।’