আরজি ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে যে জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, তাঁরা আগেই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার আন্দোলনকারীরা পাশে পেলেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও।
আজ (মঙ্গলবার - ২২ এপ্রিল, ২০২৫) সকাল সকাল তাঁরা পৌঁছে যান এসএসসি কার্যালয়ের সামনে। যেখানে সোমবার রাতভর ঘেরাও আন্দোলন চালিয়েছেন চাকরিহারা 'যোগ্য'রা। পড়ুয়াদের সঙ্গে ছিল খাবার এবং পানীয় জল। সেগুলি তাঁরা তুলে দিয়েছেন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কর্মহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাতে। যাদবপুরের পড়ুয়ারা বলছেন, যতক্ষণ এই আন্দোলন চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা চাকরিহারাদের পাশে থাকবেন।
উল্লেখ্য, এসএসসি কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল, গতকালই (সোমবার - ২১ এপ্রিল,২০২৫) তাদের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের প্যানেলভুক্ত 'যোগ্য' এবং 'অযোগ্য' চাকরিপ্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, সোমবার সন্ধে ৬টা নাগাদ বহু প্রতিক্ষিত সেই তালিকা সর্বসমক্ষে আনা হবে। কিন্তু, বাস্তবে তেমন কিছুই করা হয়নি।
বদলে এসএসসি কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, তারা সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলবে এবং যে শিক্ষক শিক্ষিকারা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের বর্তমান ব্যবস্থা অনুসারে বেতন দেওয়া হবে।
কিন্তু, এই বিবৃতি চাকরিহারাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। প্রতিবাদে রাতভর এসএসসি কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। তাঁদের কাছে খাবার ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় জল। এমনকী, শৌচালয়ের বন্দোবস্ত পর্যন্ত সেখানে নেই। তারপরও রাতভর সেখানেই বসে থেকে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা।
এ নিয়ে সোমবার সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু, তাঁদের সেখান থেকে হটানো যায়। অভুক্ত আন্দোলনকারীদের এই লড়াইয়ের পাশে থাকতেই মঙ্গলবার সকাল হতেই শুকনো খাবার ও পানীয় জল নিয়ে আন্দোলনস্থলে পৌঁছে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়ারা।
সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য অনুসারে - এই অবস্থান বিক্ষোভের জেরে এসএসসি-র চেয়ারম্য়ান সিদ্ধার্থ মজুমদার-সহ অন্য আধিকারিকরাও কার্যালয়ের ভিতর কার্যত বন্দি হয়ে রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ প্রত্য়াহার করবেন না।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এসএসসি-র ২০১৬ সালের প্রায় সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। তাতে চাকরি যায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও অশিক্ষক কর্মচারীর। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, নিয়োগ দুর্নীতি ব্যাপক আকারে হয়েছে। যোগ্য ও অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের আলাদা করা যায়নি। তাই প্রায় সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হল। তারপর থেকেই হারানো চাকরি ও মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে পথে নেমে প্রতিবাদ শুরু করেছেন 'যোগ্য' চাকরিহারারা।